ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি, কোনো অপরাধীকে বন্ধু ভাবতে নেই

গাজীপুরের রাজনীতিতে জাহাঙ্গীর আলম সব সময় ছিলেন আলোচিত মুখ। ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন তিনি। নানা ঘটনা ও নাটকীয়তার পর তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ২০১৮ সালে সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। বিতর্কিত একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার, এর কয়েক দিন পর সিটি মেয়রের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।সম্প্রতি দল তাঁকে ক্ষমা করায় আবারও জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। এসব বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে।

জাহাঙ্গীর আলম

প্রশ্ন :

এক বছরের বেশি সময় আপনি রাজনীতির বাইরে ছিলেন। এত দিন আপনার সময় কীভাবে কেটেছে?

জাহাঙ্গীর আলম: আমি কঠিন জায়গার মধ্যে জীবন যাপন করেছি। ব্যক্তিজীবনে কিছু উপলব্ধি এসেছে। মানুষকে বিশ্বাস করা যেমন ভালো, তেমনি বিশ্বাস না কারটাও জীবনের জন্য উপকারে আসে। ওই সময় ব্যক্তিগত কাজ করেছি। অবসর সময়ে লেখালেখি করেছি। লেখালেখির কাজ কিছু বাকি আছে। লেখা শেষ হলে বই আকারে প্রকাশ করা হবে।

প্রশ্ন :

ক্ষমা পেয়ে দলে ফিরেছেন, এখন কী ভাবছেন?

জাহাঙ্গীর আলম: একটা গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এক কথা থেকে আরেক কথা যুক্ত করে, মিথ্যা কিছু শব্দ একসঙ্গে লাগিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। সে জন্য দল আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে আমার দল যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নগরবাসী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

প্রশ্ন :

বহিষ্কার ও মেয়র থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর বেশির ভাগ নেতা-কর্মী আপনার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। তাঁরা এখন আবার আপনার কাছে আসছেন। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?

জাহাঙ্গীর আলম: ওই সময়ে আমার কাছে আসায় অনেক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমি জানাজায় গিয়েছি, সেখানে মৃতের পরিবার চেয়েছে আমি কিছু বলি। কিন্তু অন্যরা আমাকে কথা বলতে দেননি। একসময় যাঁরা আমাকে দিনে তিন-চারবার ফোন করে খবর নিতেন, তাঁরা প্রায় ১৪ মাস কোনো খবর নেননি। তাঁদের কল করলেও ধরেননি। অনেকের বাড়িতে গিয়েছি, বাড়িতে থেকেও বলেছেন বাড়িতে নেই।

প্রশ্ন :

এই এক বছর থেকে আপনি কী শিক্ষা নিলেন?

জাহাঙ্গীর আলম: আমি আমার ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি। কোনো অপরাধীকে বন্ধু ভাবতে নেই। অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই ভাবতে হবে। আমরা অনেক সময় খারাপটাকে সংশোধন করতে গিয়ে খারাপের সঙ্গে নিজের নাম লিখিয়ে ফেলি। এখন থেকে আমি নিজেও সতর্ক থাকব, অন্যদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেব। একশ্রেণির মানুষ ভালোটাকে খারাপ করে দেয়। আমার যেগুলো ভুল ছিল, সেগুলো আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমি নগরবাসী ও দেশবাসীর কল্যাণে কাজ করতে চাই।

প্রশ্ন :

জেলার বড় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি?

জাহাঙ্গীর আলম: মহানগরের সব নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে। যোগাযোগ হয়েছে। সবাই বলেছেন, আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমিও সবাইকে নিয়ে চলতে চাই। কোনো ভেদাভেদ করতে চাই না।

প্রশ্ন :

আপনি কবে মেয়রের পদে ফিরছেন?

জাহাঙ্গীর আলম: আমি বিশ্বাস করি, এখন যেকোনো সময়ে আমি ফিরতে পারি। তারা আমাকে ফিরিয়ে দেবে। কারণ, জেনেশুনে আমি কোনো ভুল করিনি। আমি যেহেতু মানুষ, তাই আমার কিছু ভুল থাকতে পারে।

প্রশ্ন :

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

জাহাঙ্গীর আলম: একটা সুন্দর, পরিকল্পিত নগর করতে চাই, যা সার্বিকভাবে দেশের মানুষের কাজে আসবে। আমাদের এখানে পরিকল্পনার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেকে। তাই সুন্দর একটি নগর গড়ার স্বপ্ন দেখি, যা আমি বাস্তবায়ন করতে চাই।