জাল ভোটসহ নানা অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি কৃষক লীগ নেতার

নুরে আলম সিদ্দিকী হক
ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, এজেন্ট বের করে দেওয়া, জাল ভোটসহ নানা অভিযোগ তুলে রাজবাড়ী-২ (পাংশা-বালিয়াকান্দি-কালুখালী) আসনের ঘোষিত ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হক। আজ মঙ্গলবার সকালে নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিতভাবে তিনি এ আবেদন করেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তিন দিন আগে থেকেই নৌকার কর্মী-সমর্থক ও বহিরাগত সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গভীর রাতে তাঁর নির্বাচনী এলাকার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে তাঁর সমর্থকদের বাড়িতে গিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছে। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। পুরো এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ও বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে। এতে নির্বাচনের দিন তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন রাজবাড়ী-২ আসনে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. জিল্লুল হাকিমের সমর্থকেরা পেশিশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পুরো নির্বাচনী এলাকায় রীতিমতো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। নৌকার কর্মী-সমর্থকেরা বল প্রয়োগ করে দায়িত্বরত প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সহায়তায় প্রায় সব কেন্দ্র থেকে তাঁর পোলিং এজেন্টদের বের করে দেন। এমনকি ভোট গণনার সময়ও তাঁর পোলিং এজেন্টদের বুথে থাকতে দেওয়া হয়নি।

জাল ভোটের অভিযোগ তুলে কৃষক লীগের এই নেতা উল্লেখ করেন, পাংশার মৌরাট ইউনিয়নের বাগদুলী উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে নৌকার কর্মীরা প্রকাশ্যে জাল ভোট দেন। জাল ভোট দেওয়ার সময় সাংবাদিকদের সামনে হাতেনাতে ধরলেও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রহস্যজনক কারণে তাঁকে ছেড়ে দেন। পাংশার পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে নৌকার কর্মী রানা বিশ্বাস জাল ভোট দিতে গিয়ে ধরা পড়লেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এসব কারণে নৌকার কর্মীরা অব্যাহতভাবে জাল ভোট দিয়েছেন।

ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলা হয়, বালিয়াকান্দির রামদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিজে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ফেলেছেন। কালুখালীর মাঝবাড়ী ইউনিয়নের হাড়িভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হলেও আরেক অভিযুক্ত ওই কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার দেকে ভারপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কালুখালীর মদাপুর ইউনিয়নের গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নাছিমা খাতুন প্রতিটি ব্যালটে নিজের অগ্রিম স্বাক্ষর ও পেছনে নির্বাচন কমিশনের গোল সিল মেরে ব্যালট বাক্সের মধ্যে ঢোকাতে থাকেন। পাশের গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সমরেশ কুমার দে নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল মেরে বাক্সে ভরেন। পরে তিনি নৌকা প্রতীকের আর কোনো সিল মারবেন না বলে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকারোক্তি দেন। এসব ঘটনার কারণে ঘোষিত ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে নৌকার প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট এ কে এম শফিকুল মোরশেদ বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে করা অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এখনই প্রথম শুনলাম। এখন আর বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। অভিযোগ থাকলে প্রমাণ সাপেক্ষে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারে।’

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, ‘একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে এখন আর কোনো মন্তব্য করব না। ইতিমধ্যে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। কেউ সংক্ষুব্ধ হলে উচ্চ আদালতে যেতে পারেন।’

রাজবাড়ী-২ আসনে মো. জিল্লুল হাকিম (নৌকা) ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৮৪ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নুরে আলম সিদ্দিকী হক (ঈগল) পেয়েছেন ৪৬ হাজার ৪৬৬ ভোট। এ ছাড়া এস এম ফজলুল হক (সোনালী আঁশ) ৭৬৫, আবদুল মতিন মিয়া (মশাল) ২ হাজার ৬০২, আবদুল মালেক মন্ডল (ছড়ি) ৮৪৭ ও শফিউল আজম খান (লাঙ্গল) ২ হাজার ৫৩৪ ভোট।