রাজশাহী কলেজে এক শিক্ষার্থীর কাণ্ড

রাজশাহী কলেজের এক শিক্ষার্থীর কাণ্ডে কলেজ ক্যাম্পাসে তোলপাড়। পুলিশ ডেকে ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসেছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী কলেজের এক ছাত্রী কলেজের অন্য এক ছাত্রীকে শায়েস্তা করতে তাঁর বড় বোনকে কলেজে নিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। পরে তাঁদের উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ ডাকে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে দুই ঘণ্টা কলেজে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে।

আজ দুপুর থেকে ওই ছাত্রী ও তাঁর বোনকে আটকে রাখা হয়। তাদের শাস্তির দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ গিয়ে এক শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর অন্যজনকে বাবার জিম্মায় ছাড়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে ছোট বোন রাজশাহী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বড় বোনকে পুলিশ উদ্ধারের সময় তার ওপর হামলার চেষ্টা হয়েছিল। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষক আঘাত পান।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. যহুর আলী বলেন, তাঁর কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর সঙ্গে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের বন্ধুত্ব আছে। সম্প্রতি একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসফর হয়। গাড়িতে ছেলেটি নাকি তার সহপাঠীদের সঙ্গে নাচানাচি করে। এতে ক্ষুব্ধ হয় দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী। সে তার বড় বোন ও বহিরাগত এক ছেলেকে নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে যান এবং শিক্ষার্থীদের অপমানজনক কথা বলেন। এর ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

অধ্যক্ষ বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি কলেজ পুলিশ বক্সের সদস্যদের ওই দুই বোনকে আমার কার্যালয়ে আনতে বলি। তাদের আনা হলে বড় বোনটি আমার সঙ্গেই উচ্চবাচ্য করে। এতে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং তাদের শাস্তির দাবি জানাতে থাকে।’ তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে আমরা দুই বোনের মাকে ডেকে পাঠাই। তিনি এসে বলেন যে তার বড় মেয়ের মানসিক সমস্যা আছে। এটা জানার পরই আমরা তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ শুরু করি। কয়েকবার শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করি যেন তারা তাদের নিরাপদে চলে যেতে দেয়। এভাবে চারবার বের করার চেষ্টা করেও আমরা প্রতিবার ব্যর্থ হয়েছি।’

অধ্যক্ষ যহুর আলী আরও বলেন, ‘পরে আমরা থানা-পুলিশকে ডাকি। পুলিশ এসে মা ও তার বড় মেয়েকে নিয়ে যায়। গাড়িতে তোলার সময় তাদের ওপর আক্রমণের চেষ্টা হয়। এ সময় ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে আমাদের কয়েকজন শিক্ষক আঘাত পান। মা-মেয়েকে পুলিশের সঙ্গে পাঠানোর পর পরিস্থিতি যখন শান্ত হয়, তখন বাবাকে ডেকে আমরা আমাদের কলেজের শিক্ষার্থীকে হস্তান্তর করি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’

অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘বিন্দু থেকে সিন্ধু ঘটে গেছে। তবে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, এটাই স্বস্তি। আমাদের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে খুব সহযোগিতা করেছে। আমরা মা ও বড় মেয়েটিকে পুলিশের কাছে তুলে দিলেও তাদের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ করিনি। পুলিশ ছেড়ে দেবে।’

নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘দুপুরের দিকে খবর পেয়ে আমরা মা-মেয়েকে আনি। আমরা যে মেয়েটাকে এনেছিলাম, তার নামে অনেক অভিযোগ। তাই তার একটা মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। এরপর বিকেলে মা-মেয়েকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’