পতিত জমিতে আনারস বাগান

পতিত জমিগুলোতে এখন শোভা পাচ্ছে আনারসের বাগান। এই ফল চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।

কয়েক বছর আগেও টিলা আকৃতির পতিত জমিগুলো ছিল আগাছায় ভরা। তেমন কোনো ফসল ফলানো যেত না, একপ্রকার অকেজো ছিল এসব জমি। তবে গত কয়েক বছরে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের এই চিত্র অনেকটা পাল্টে গেছে। পতিত জমিগুলোতে এখন শোভা পাচ্ছে আনারসের বাগান। আগাম জাতের এসব আনারস স্বাদেও অনন্য। এই ফল চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।

কাপাসিয়ার প্রায় সব অঞ্চলে আগে থেকেই কিছু না কিছু আনারস চাষ হতো। তবে কয়েক বছর ধরে উপজেলার রায়েদ, টোক ও বারিষাব ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে আনারস চাষ ব্যাপকতা পেয়েছে। এসব জমিতে স্থানীয়, জলঢুপ ও ক্যালেন্ডার জাতের আনারস চাষ হয়। কৃষকেরা বলছেন, ধান ও অন্যান্য ফসলের চেয়ে আনারস চাষ লাভজনক। ফলের পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে চারাও। সেখান থেকে বাড়তি আয়ও করা যায়।

সম্প্রতি কাপাসিয়ার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টোক ইউনিয়নে এ বছর নতুন করে ১০০ জন কৃষক আনারস চাষে যুক্ত হয়েছেন। রায়েদ ইউনিয়নে বেশ কয়েকজন কৃষক আখ চাষের পাশাপাশি আনারস চাষ শুরু করেছেন। বারিষাব ইউনিয়নে পতিত পড়ে থাকা প্রচুর জমি আনারস চাষের আওতায় এসেছে।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানানো হয়, উঁচু যেকোনো জমিতে আনারসের ফলন ভালো হয়। কাপাসিয়ার কিছু এলাকায় প্রায় প্রতিটি কৃষক পরিবারের টিলার মতো জায়গা ফেলনা পড়ে আছে। এসব জমি আনারস চাষের আওতায় আসছে।

কৃষকদের ভাষ্য, আনারস চাষে রোগবালাই খুব একটা নেই। কাপাসিয়ায় চাষ করা আনারসের জলঢুপ জাতটি অন্যান্য আনারসের তুলনায় বেশ আগেই পাকা শুরু করে। ফলে বাজারে দামও ভালো পাওয়া যায়। তা ছাড়া অন্যান্য এলাকার আনারসের চেয়ে কাপাসিয়ায় উৎপাদিত আনারসের মিষ্টতা অনেক বেশি।

টোক ইউনিয়নের বীরউজুলী গ্রামের কৃষক মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি প্রায় তিন বিঘা জমিতে ক্যালেন্ডার ও জলঢুপ জাতের আনারস চাষ করেছেন। জমিটি ধান চাষের উপযোগী না হওয়ায় তিনি দুই বছর আগে সেখানে আনারস চাষ শুরু করেন। এ বছর তিনি ৫০ হাজার টাকার আনারস বিক্রি করতে পেরেছেন। শুধু আনারস বিক্রি নয়, প্রচুর টাকার চারাও বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। আনারসের প্রতিটি চারা ৮–১০ টাকায় বিক্রি হয়।

বারিষাব ইউনিয়নের লোহাদি গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম দুটি আলাদা জায়গায় পাঁচ বিঘা জমিতে জলঢুপ জাতের আনারস চাষ করেছেন। তাঁর বাগানের বয়স পাঁচ বছর। উঁচু জমি হওয়ায়, সেখানে একসময় কোনো ফসল উৎপাদন করা যাচ্ছিল না। পরে আশপাশের কৃষক ও স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে সেই জমিতে আনারসের আবাদ শুরু করেন। দুটি প্লট থেকে এ বছর এক লাখ টাকার আনারস বিক্রি করেছেন জাহিদুল। এ ছাড়া তাঁর বাগান থেকে প্রতিনিয়ত আনারসের চারা বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষি অফিসের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমানের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে কাপাসিয়া উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। উৎপাদিত আনারসের পরিমাণ ছিল ৪৯–৫০ মেট্রিক টন। পুরো কাপাসিয়ায় ১০ হাজারের মতো কৃষক আছেন, যাঁরা নিয়মিত আনারস চাষ করছেন। দুই বছর আগের তুলনায় বর্তমানে আনারসচাষির সংখ্যা বেড়েছে।

কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার প্রথম আলোকে বলেন, আনারস চাষে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। আনারসের উৎপাদন কীভাবে বাড়ানো যায়, এ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকেরা ঋণ চাইলে তাঁদের জমির ওপর ভিত্তি করে সরকারের ৪ শতাংশ সুদে ঋণের সুবিধা দেওয়া হবে।