‘আম্মু, স্কুলে যাচ্ছি, টাটা বাই বাই’—এটা ছিল সায়মার শেষ কথা

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত শিশুশিক্ষার্থী সায়মা আক্তারছবি: পরিবার থেকে সংগৃহীত

‘প্রতিদিনই মেয়েকে আমি স্কুলে নিয়ে যাই, কিন্তু গতকাল যাইনি। আমার এক ভাই সায়মাকে স্কুলে নিয়ে যায়। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমাকে বলে, “আম্মু, স্কুলে যাচ্ছি, টাটা বাই বাই।” এটাই যে আমার মেয়ের সঙ্গে শেষ কথা ছিল, বুঝতে পারিনি। দুপুরে ফেসবুকে জানতে পারি, আমার মেয়ে দুর্ঘটনায় মারা গেছে।’

এভাবেই মেয়ের সঙ্গে শেষ স্মৃতি স্মরণ করে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় নিহত সায়মা আক্তারের মা রিনা বেগম।

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত হয় ৯ বছরের সায়মা আক্তার। সে ওই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

গতকাল সোমবারের ওই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ জনে। আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৭৮ জন।

সায়মা আক্তারের বাবা মোহাম্মদ শাহ আলম গাজীপুর মহানগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিপ্রবর্ধা গ্রামের বাসিন্দা। চাকরিসূত্রে তিনি পরিবার নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় বসবাস করতেন। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানিতে কর্মরত।

দুর্ঘটনায় নিহত সায়মার মা রিনা বেগমকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন স্বজনেরা। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিপ্রবর্ধা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সায়মার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে গ্রামের স্থানীয় একটি জামে মসজিদের মাঠে জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। মেয়ের মৃত্যুতে পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সকাল থেকে শত শত গ্রামবাসী ওই বাড়িতে ভিড় করেন। আগুনে পুড়ে যাওয়া সায়মার মুখ দেখে জানাজায় অংশ নেওয়া অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

নিহত সায়মার বড় ভাই সাব্বির হোসেন চলতি বছর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেছে। ছোট বোনের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলে, ‘তুই আমার কলিজা, তুই আমার জান। প্রতিদিন আমরা একসঙ্গে স্কুলে যেতাম। এখন আমি কাকে নিয়ে স্কুলে যাব? তুই কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলি? আমি তোকে ছাড়া বাঁচব না।’

নিহত সায়মার বড় ভাই সাব্বির হোসেনের আহাজারি। আজ বেলা ১১টার দিকে
ছবি: প্রথম আলো

সায়মার বাবা শাহ আলম বলেন, ‘আমার এক বন্ধু ফোন করে জানায়, স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এরপর সারা দিন খোঁজাখুঁজি করেছি, পাইনি। রাত ৮টার দিকে জানতে পারি সিএমএইচে মরদেহ আছে। পরে লাশ নিয়ে এসেছি। গত রাতেও মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিল। কতবার চুমু দিয়েছে, তার হিসাব নেই। এরপর আর মায়ের সঙ্গে কথা হয়নি। আমার মেয়ে আর আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে না। এই কষ্ট কীভাবে সহ্য করব!’