ওপারে গুলির শব্দ নেই, স্বস্তি ফিরছে সীমান্তে

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জেরে তৎপর বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। গতকাল দুপুরে টেকনাফ জেটিঘাট এলাকায়ছবি: জুয়েল শীল

কক্সবাজারের টেকনাফের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের ওপার থেকে গতকাল বুধবারও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। আগের দিন মঙ্গলবারও ছিল শান্ত। টানা দুই দিন গোলাগুলির শব্দ না থাকায় সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসছে। তবে গোলাগুলির শব্দ শোনা না গেলেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।

এ ছাড়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, কক্সবাজারের উখিয়া রহমতের বিল ও টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি এক সপ্তাহ ধরেই শান্ত।

আরও পড়ুন

ওপারের মিয়ানমার পরিস্থিতির খবরাখবর রাখছেন সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। তাঁরা বলছেন, গত ১৮ দিনের লড়াইয়ে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি ওপারে মিয়ানমারের অধিকাংশ সীমান্তচৌকি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে লড়াইয়ের তীব্রতা কমে এসেছে।

ওপারে মংডু এলাকা রোহিঙ্গা অধ্যুষিত। এ জন্য অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশ।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী

২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ চলছে। ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ সে দেশের ৩৩০ জন এ দেশে ঢুকে পড়েন। ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে তাঁদের মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, দুই পক্ষের লড়াই তিন-চার দিন ধরে রাখাইনের মংডু শহরের আশপাশে হচ্ছে। ধীরে ধীরে বিদ্রোহীরা মংডু শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। মংডুর এপারে টেকনাফ উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের সেন্ট মার্টিন ও সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ।

এতে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন সীমান্ত এলাকার মানুষেরা। তারপরও আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি, কখন আবার গোলাগুলি শুরু হয়।

শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা খলিলুর রহমান বলেন, গত সোমবার দিনভর থেমে থেমে টেকনাফ সীমান্তে গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ শোনা গিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গোলাগুলি কিংবা ভারী অস্ত্রের বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়নি। এতে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন সীমান্ত এলাকার মানুষেরা। তারপরও আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি, কখন আবার গোলাগুলি শুরু হয়।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের পাশের বলিবাজার, মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাহপাড়া, মাংগালা, নলবন্ন্যা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকায় লড়াই এখনো চলছে। বিদ্রোহীরা মংডুর দিকে অগ্রসর হচ্ছেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন।

গতকাল দুপুরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে গিয়ে দেখা যায়, সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা। সীমান্তের আশপাশের এলাকায় দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের টহলও। পরে বেলা দুইটার দিকে টেকনাফ জেটিঘাট এলাকায় গিয়েও দেখা গেছে একই চিত্র।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ওপারে মংডু এলাকা রোহিঙ্গা অধ্যুষিত। এ জন্য অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশ।