বাংলাদেশের শিক্ষা আনন্দদায়ক নয়: সলিমুল্লাহ খান

সেমিনারে বক্তব্য দিচ্ছেন লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। শুক্রবার সন্ধায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের শিক্ষা আনন্দদায়ক নয় বলে মন্তব্য করে লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘এর কারণ হচ্ছে আমাদের ভালো শিক্ষক নেই। শিক্ষক আর শিক্ষার্থীর মধ্যে আগে ছিল হাইফেন, যা এখন লম্বা ড্যাশে পরিণত হয়েছে। এই ড্যাশ বড় হতে হতে পৃথিবীর পরিধির সমান হয়ে গেছে। এর ফলে শিক্ষক একদিকে আর শিক্ষার্থী আরেক দিকে এবং মাঝখানে প্রতিষ্ঠান রয়ে গেছে।’

শুক্রবার সন্ধায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে এ কথা বলেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিন যুগ পূর্তি উপলক্ষে ‘নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ: কোন পথে?’ শীর্ষক সেমিনারটি আয়োজন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পাঠক ফোরাম।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আমাদের যদি শিক্ষাকে স্থায়ী করতে হয়, তাহলে শিক্ষাকে আনন্দদায়ক করতে হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রথম কাজ হচ্ছে আমাদের পাঠক তৈরি করা। পাঠক মানেই শ্রোতা ও দর্শক তৈরি করা। মানুষ তার সমস্ত ইন্দ্রিয় ব্যবহার করতে পারে, এমন শিক্ষা তৈরি করা, যেটা আমরা পারিনি।’

ব্রিটিশ শাসন অবসানের ৮০ বছরেও দেশের মানুষকে শতভাগ শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে এই লেখক বলেন, ‘আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে দুইবার; ১৯৪৭ সালে একবার আর ১৯৭১ সালে আরেকবার। ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর থেকে আমাদের স্বাধীনতার বয়স প্রায় ৮০ বছর ছুঁই ছুঁই। তাহলে ওই দেশের মতো শতকরা ১০০ জন শিক্ষিত আমরা কেন গড়ে তুলতে পারিনি?’

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে কতজন মানুষ সংবাদপত্র পড়তে পারে? আমাদের দেশে একটা হিসাব আছে, যারা নাম-দস্তাবেজ স্বাক্ষর করতে পারে, তারাই পাঠক। তাহলে তো শতকরা ১৪ জন লোক পড়তে পারে। কিন্তু ইউনেসকোর হিসাবে শতকরা পাঁচ-ছয়জন লোকও পত্রিকা পড়ে না। এর কারণ, যেমন অনেকে পড়ে না, আবার অনেকে পড়তে পারে না। তাহলে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে দেশের শতভাগ মানুষ পড়তে পারে, সেই ব্যবস্থা কি করতে পারি না?’

নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে বাধা ও এর উত্তরণ প্রসঙ্গে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আমাদের দেশে সব মিলিয়ে ৩৫ ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। কিন্তু সব মিলিয়েও আমাদের দেশে শতভাগ মানুষ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করতে পারে না। প্রাথমিক শিক্ষা শতভাগ কেন আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি, শুধু এই প্রশ্নটা যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে বাধাটা কোথায়, তার ঠিকানা পাব।’

শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয় উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা যদি সংস্কার করতে না পারা যায়, শিক্ষাকে যদি মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা না যায়, তাহলে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে শতভাগ প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘শিক্ষা সংকটে পথ দেখায়। আমরা সমস্যায় পড়লে শিক্ষা সমাধান দেখিয়ে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে। তবে মানুষের অধিকার, ইনসাফ, সমাজের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে উচ্চশিক্ষিত হয়েও লাভ নেই। শিক্ষার সঙ্গে এই বিষয়টি দেখতে হবে।’
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আলম মাসউদ, পাঠক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আরিফ হাসনাত প্রমুখ।