শেডের নির্মাণকাজ বন্ধ এক বছর

নির্মাণাধীন স্থাপনা হাটের ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে। জায়গার অভাবে দোকানিরা ভোগান্তির শিকার।

অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে হাটের শেড নির্মাণের কাজ। সম্প্রতি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী বাজারে শেড নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ পার হয়েছে এক বছর আগে। তবে কাজের অগ্রগতি মাত্র ২৫ শতাংশ। প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখেই ঠিকাদার চলে গেছেন। প্রায় এক বছর ধরে সেখানে কাজ বন্ধ রয়েছে।

এদিকে নির্মাণাধীন স্থাপনা হাটের ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে। জায়গার অভাবে দোকানিরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সেখানকার দোকানি ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, শুরু থেকেই ঠিকাদার পুরোদমে কাজ করেননি। একদিন কাজ করেছেন তো, এক মাস কাজ বন্ধ রেখেছেন। তখন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেয়নি এলজিইডি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে গ্রামীণ হাটবাজারের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রায়কালী বাজার উন্নয়নে দোতলা শেড নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করে। নওগাঁর মের্সাস মণ্ডল ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২ কোটি ৬৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকায় চুক্তি মূল্যে কাজটি পায়। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারির সংশোধিত চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৯ জুন পর্যন্ত অনুমোদিত কাজের সময়সীমা ছিল। ওই সময় পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৫ ভাগ কাজ করে। কাজ শেষ করার জন্য মৌখিক ও লিখিতভাবে তাগাদা দেয় এলজিইডি। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে পারেনি।

এদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস মণ্ডল ট্রেডার্স এই কাজের বিপরীতে ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ৩৯ লাখ ৭১ হাজার ৮৫২ টাকা জামানত দিয়েছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকের জামানতের পুরো টাকা নগদায়ন করতে নির্বাহী প্রকৌশলী আলাউদ্দীন হোসেন ২০২২ সালের ২২ জুলাই মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নওগাঁ শাখার ব্যবস্থাপকে চিঠি দেন। ওই চিঠি দেওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবারও নির্মাণকাজ শুরু করে। এরপর দুই মাস কাজ করার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন সেখান থেকে চলে যায়। এর পর থেকে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার জাহাঙ্গীর আলমের মুঠোফোনে গতকাল রোববার একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

সম্প্রতি রায়কালী হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটের জায়গাজুড়ে শেডের আরসিসি পিলার দাঁড়িয়ে আছে। পিলারের রডগুলোতে মরিচা ধরেছে। কাপড় ব্যবসায়ী জামিদুল ইসলাম বলেন, এক বছরের অধিক সময় ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। জায়গার অভাবে হাটে দোকানপাট বসাতে কষ্ট হয়। বৃষ্টির পানি জমে থাকায় চলাচলে কষ্ট হয়। জায়গার অভাবে অনেকে হাট বসতে পারছেন না। অনেকে হাটের ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।

মুদিদোকানি আত্তাব সরদার বলেন, ঠিকাদার এক দিন কাজ করলে এক মাস কাজ বন্ধ রাখেন। শুরু থেকেই এভাবে কাজ হচ্ছে। এত দিন দ্বিতীয় তলার হাট শেডে দোকানপাট বসত। লোকজন কেনাকাট করতে পারতেন। এলজিইডির লোকজন এসে শুধু দ্রুত কাজ শুরু হবে আশ্বস্ত করে চলে যান। নির্মাণকাজ আর শুরু হয় না।

রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আবদুর রশিদ বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকে হাট শেড নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারের কাছে গিয়ে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেছি। শুনেছি, লোকসানের ভয়ে ঠিকাদার আর কাজ করবেন না। এই ঠিকাদার যেখানে কাজ পেয়েছেন, সেখানে একই অবস্থা করে রেখেছেন। ঠিকাদারে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

এলজিইডির জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আলাউদ্দিন হোসেন বলেন, ‘দেড় বছর নির্ধারিত সময় পার হওয়ার এক বছর অতিবাহিত হয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র ২৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। ঠিকাদারকে মৌখিক ও লিখিতভাবে তাগাদা দিয়ে কাজ হয়নি। এ জন্য ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচবার ঠিকাদারের জামানতের টাকা নগদায়ন করতে ব্যাংকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু ব্যাংক থেকে জামানতের টাকা নগদায়ন করেনি। এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসকের (ডিসি) মহোদয়ের শরণাপন্ন হয়েছি।’