কুমারখালীতে শান্তি সমাবেশের ৮ দিন পর আবার সংঘর্ষ, চারজন আহত

ভাঙচুর করা ঘরবাড়ি। শনিবার দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চড়পাড়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা আবার সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। আজ শনিবার সকালে সংঘর্ষে বাড়িঘর ভাঙচুরসহ অন্তত চারজন আহত হয়েছেন। তাঁদের কুষ্টিয়া ও কুমারখালী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

গ্রামের কয়েক বাসিন্দা জানান, চরপাড়া গ্রামে অন্তত দুই শতাধিক পরিবারে বসবাস। ২০২০ সালে জমির আল নিয়ে বিরোধে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন গ্রামের দুলাল মিস্ত্রি। আর অন্য পক্ষের নেতা হলেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আনসার আলী।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, ১১ আগস্ট সন্ধ্যায় সংঘাত বন্ধে চরপাড়ায় শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে উভয় পক্ষ সংঘাত পরিহার করে শান্তিপূর্ণভাবে মিলেমিশে বসবাস করার প্রতিশ্রুতি দেন। ওই সমাবেশে পুলিশ কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেই সমাবেশের আট দিন পর উভয় পক্ষ সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

ভাঙচুর করা ঘরবাড়ি। শনিবার দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চড়পাড়া গ্রামে
প্রথম আলো

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৬ মে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুলাল মিস্ত্রির সমর্থক হুমায়ূন মণ্ডলকে (৪৪) কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। হুমায়ূন মণ্ডলের ছোট ভাই সাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৩৬ জনের নামের একটি মামলা করেন। এরপর ১ আগস্ট হুমায়ূন হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি ও আনসার আলীর সমর্থক সেলিমকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় সেলিমের ভাই শাহীন আলী থানায় ২৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন। হামলা ও গ্রেপ্তারের আতঙ্কে আসামিরা পলাতক ছিলেন।

সেলিম হত্যা মামলার আসামিরা জামিনে বেরিয়ে দুই শতাধিক সমর্থক নিয়ে আজ সকালে গ্রামে ঢোকেন এবং বাড়িতে ওঠেন। খবর পেয়ে বাদীপক্ষের লোকজন তাঁদের দেখতে যান। এ সময় আসামিপক্ষের লোকজন বাদীপক্ষের ওপর হাঁসুয়া, রামদা, ঢাল, সড়কিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করেন। এতে বাদীপক্ষের লিটন শেখ (২৫), মামুন আলী (৩৫) ও আবদুল কাশেম (৫০) গুরুতর আহত হন। এ সময় আসামিপক্ষের আসলাম হোসেনও (৪৫) গুরুতর আহত হন।

চড়পাড়া গ্রামে সংঘর্ষে আহতদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

এ ঘটনার পর আবারও এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ বাড়িতে ভাঙচুরের চিহ্ন। গ্রামের মোড়ে মোড়ে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ টহল দিচ্ছে।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আনসার আলী বলেন, ‘প্রতিপক্ষরা জামিন নিয়ে গ্রামে ঢুকে দুলাল ও রেজাউলের নেতৃত্বে হামলা হামলা চালায়। আমার কয়েকজন সমর্থক গুরুতর জখম হয়েছে। তাদের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি। পরে কথা বলব।’

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লিটন শেখ, মামুন আলী ও আবুল কাশেম। তাঁদের স্বজনেরা জানান, সকালে আসামিপক্ষের লোকজন গ্রামে ঢুকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করেন। এতে লিটনের বুকে বল্লমের আঘাত লেগেছে। মামুন ও কাশেমের শরীরের একাধিক স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে।

দুলাল মিস্ত্রি ও তাঁর সমর্থকেরা পলাতক থাকায় তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, সেলিম হত্যা মামলার আসামিরা সকালে পুলিশকে না জানিয়ে বাড়িতে ওঠেন। এরপর দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত চারজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।