কক্সবাজারে সৈকতে তরুণীদের হেনস্তা
গ্রেপ্তার ফারুকুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দুই তরুণীকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর, কান ধরে ওঠবসসহ হেনস্তা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলামকে ( ২৩) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আজ রোববার কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে। তবে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ ঘটনায় করা মামলার অন্য কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রেপ্তার ফারুকুল ইসলামকে গতকাল শনিবার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। আজ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো শুনানি হয়নি।’
পুলিশ জানায়, গতকাল বিকেলে ভুক্তভোগী এক নারী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ফারুকুল ইসলাম ও নয়ন রুদ্র দুজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। গত শুক্রবার রাতেই শহরের ভোলা বাবুর পেট্রলপাম্প-সংলগ্ন এলাকা থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করে ফারুকুল ইসলামকে। ফারুকুল চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকার বাসিন্দা মাজেদুল ইসলামের ছেলে। তিনি মাদ্রাসার ছাত্র। কয়েক বছর ধরে তিনি শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাহারছড়া এলাকায় থাকছিলেন।
পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, ১১ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা থেকে দিবাগত রাত ১২টার মধ্যে মামলার বাদী তাঁর একজন বান্ধবীর সঙ্গে সুগন্ধা সৈকতে ঘুরতে যান। তখন ফারুকুল ইসলাম ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে তাঁদের গতি রোধ করেন ও গালিগালাজ করতে থাকেন। সমুদ্রসৈকতে অপকর্ম করার অভিযোগ তুলে ফারুকুল ইসলামসহ কয়েকজন একপর্যায়ে তাঁদের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন। লাঠির আঘাতে বাদী ডান হাতের বাহুতে আঘাত পেয়েছেন। তাঁর হাতের হাড় ভেঙে গেছে। এ ছাড়া তাঁর ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীও আঘাত পেয়েছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
শুক্রবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সৈকতে দুই তরুণীকে মারধর, কান ধরে ওঠবস ও হয়রানির তিনটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তা দেখে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণীকে কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে। তাঁকে ঘিরে রেখেছেন কয়েকজন তরুণ-যুবক। বেশির ভাগ তরুণ মুঠোফোনে মারধরের ভিডিও ধারণ করছিলেন। তরুণীকে লাঠি দিয়ে মারধর করে সৈকত থেকে চলে যেতে বলা হচ্ছিল।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তরুণীদের হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় পর্যটকসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের বলে মন্তব্য করেন কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্যসচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।