বারান্দায় ঘুমিয়ে রাখা শিশুকে নদে ফেলে হত্যা করেন বাল্যবিবাহের শিকার কিশোরী মা: পুলিশ

প্রতীকী ছবি

পাবনার চাটমোহরে নদের পাড় থেকে ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে রাখা পাঁচ মাসের শিশুর লাশ উদ্ধারের ঘটনা নাটকীয় মোড় নিয়েছে। পুলিশের দাবি, বাল্যবিবাহের শিকার শিশুটির মা (১৫) সাংসারিক অশান্তি থেকে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্তানকে নদে ফেলে হত্যা করেছেন। ঘটনার পর ওই নারী জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে এ কথা স্বীকার করেছেন। আদালতেও জবানবন্দি দিয়েছেন।

আজ সোমবার দুপুরে সহকারী পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) আরজুমা আক্তার সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান। এ সময় চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলমসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

ঘটনাটি পাবনার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের একটি গ্রামে। গত শনিবার সকালে বাড়িতে ঘরের বারান্দায় শিশুটি ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। এরপর বাড়ির পাশের বড়াল নদ থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার হয়। ঘটনাটি নিয়ে ওই দিনই প্রথম আলো অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা আরজুমা আক্তার বলেন, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছিল। শিশুটির পরিবারের সঙ্গে কারও বিরোধ আছে কি না, তা জানার চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে শিশুটির মায়ের কথাবার্তার মধ্যে কিছু অসংগতি পাওয়া যায়। পরে থানায় এনে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি নিজেই তাঁর শিশুকন্যাকে হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেন।

শ্রাবন্তী রানীর স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার আরজুমা আক্তার বলেন, মেয়েটি বাল্যবিবাহের শিকার। পরিবারের সব কাজ তাঁকে করতে হয়। চারটি গরু, ছাগল ও হাঁস–মুরগি দেখাশোনা করতে হয়। এর মধ্যেই তাঁর মেয়েশিশুর জন্ম হয়। শিশুটির কান্নায় রাতে তিনি ঘুমাতে পারতেন না। দিনে সংসারের কাজ করতে হতো। এসব কারণেই মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে নিজের সন্তানকে বড়াল নদে ফেলে হত্যা করেন। পরে নিজেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন নাটক সাজান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম বলেন, ঘটনার পর শিশুটির বাবা বাদী হয়ে চাটমোহর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলাটিতেই কিশোরী মাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। ওই আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সন্তানের লাশ উদ্ধারের পর ওই কিশোরী মা বলেছিলেন, সকাল ছয়টার দিকে তিনি শিশুমেয়েকে ঘরের বারান্দায় ঘুম পাড়িয়ে বাড়ির বাইরে গরুর খড় আনতে যান। ফিরে দেখেন মেয়ে বিছানাতে নেই। তিনি চিৎকার–চেঁচামেচি করে বাড়ির এদিক–ওদিক মেয়েকে খুঁজতে থাকেন। ঘণ্টাখানেক খোঁজাখুঁজি করেও মেয়ের সন্ধান পাননি। সকাল সাতটার দিকে বাড়ির পাশের বড়াল নদের পাড়ে কচুরিপানার ভেতর স্থানীয় লোকজন শিশুটির লাশ দেখতে পান। পরে লাশটি উদ্ধার করা হয়।