ধসে পড়ার শঙ্কায় পৌর মার্কেট

বেড়া পৌর মার্কেটটি প্রথম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ২০১৩ সালে। একাধিকবার ব্যবসায়ীদের মালামালসহ সরে যাওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

১০ বছর আগে পাবনার বেড়া পৌরসভা মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। তবু বেচাকেনা করছেন ব্যবসায়ীরা। গত শনিবার তোলাছবি: প্রথম আলো

পাবনার বেড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে তিনতলাবিশিষ্ট বেড়া পৌর মার্কেট। এর প্রধান ফটকে টাঙানো রয়েছে ‘একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ শিরোনামের একটি ডিজিটাল নোটিশ। এতে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে ব্যবসায়ীদের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। জানমালের ক্ষতি হলে পৌর কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু বিকল্প জায়গা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায়ীরা এ ভবনেই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।

বেড়া পৌর মার্কেটটি প্রথম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ২০১৩ সালে। এরপর একাধিকবার মার্কেটের অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ীকে পৌর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মালামালসহ সরে যাওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ নোটিশে বলা হয়েছে, ‘ইতিপূর্বেই এই ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করে ভবনের ব্যবসায়ীদের মালামাল সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনেই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। পুনরায় ব্যবসায়ীদের মালামাল স্থানান্তরের অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় জানমালের কোনো ক্ষতি হলে পৌর কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।’

মাস তিনেক আগে দোকানের ভেতরে ছাদ থেকে বড় একটি অংশ আমার সামনে খুলে পড়েছিল। সেদিন অল্পের জন্য বেঁচে গেছি।
মো. মনিরুজ্জামান, ব্যবসায়ী

বিকল্প জায়গা না থাকায় ঝুঁকি জেনেও ব্যবসায়ীরা এ ভবনেই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। তবে মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা সব সময় ভবনটি ধসে যাওয়ার আতঙ্কে থাকেন। এর ওপর ভূমিকম্প হলে তো কথা নেই। আতঙ্ক এমন চরমে ওঠে যে তখন অনেকে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। গত শনিবার সকালে ভূমিকম্পের সময় এ ভবনের অনেক ব্যবসায়ী ভয়ে ছোটাছুটি করেন।

১৯৯২ সালে ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গায় তৎকালীন পৌর কর্তৃপক্ষ একটি তিনতলা ভবন গড়ে তোলে। অথচ বিধি মোতাবেক ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গায় পাকা স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। স্থানীয় অনেকের অভিযোগ, ওই সময় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে দুর্বল অবকাঠামোর ওপর ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এর ফলে ১০-১২ বছরের মধ্যে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

প্রায় ১০ বছর আগে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে ব্যবসায়ীদের বিকল্প কোনো স্থানে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ভবনটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

পৌর সুপার মার্কেটের উত্তর-পশ্চিম দিকের ১৭ নম্বর দোকান ভাড়া নিয়ে হার্ডওয়্যারের ব্যবসা চালাতেন মো. মনিরুজ্জামান। সপ্তাহখানেক আগে তিনি মার্কেট থেকে তাঁর দোকানটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দোকানের সামনের অংশ ও ভেতরের ছাদ থেকে প্রায়ই ইটের টুকরা ও প্লাস্টার খুলে পড়ে। মাস তিনেক আগে দোকানের ভেতরে ছাদ থেকে বড় একটি অংশ আমার সামনে খুলে পড়েছিল। সেদিন অল্পের জন্য বেঁচে গেছি।’

পৌর মার্কেটে থাকা মুদিদোকানি লিটন চৌধুরী, কাঁসা-পিতল ব্যবসায়ী আবদুল মোমিনসহ চার-পাঁচজন ব্যবসায়ী জানান, বছর দশেক আগে পৌর কর্তৃপক্ষ দোকান ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছিল। সম্প্রতি আবারও দিয়েছে। কিন্তু দোকান ছেড়ে দিলে আয়ের পথ একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই মারাত্মক ঝুঁকি জেনেও তাঁরা এই মার্কেটে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।

পৌর মার্কেটের সঙ্গে একেবারে লাগোয়া আবদুল জলিল সুপার মার্কেটের মালিক ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘পৌর মার্কেট ভবনের দক্ষিণ দিকের ১০ থেকে ১২টি দোকান পুরোপুরি আড়ালে পড়ে গেছে। এসব দোকানে প্রবেশের রাস্তা একেবারে সরু হয়ে গেছে। পৌর মার্কেটের ভবনটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে আমাদের সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়।’

বেড়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী ফিরোজুল আলম বলেন, ১০ বছর আগেই ব্যবসায়ীদের সরে যাওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এ–সংক্রান্ত একটি ডিজিটাল নোটিশ বিজ্ঞপ্তি আকারে ভবনে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের মাসিক ভাড়াও স্থগিত করা হয়েছে।