প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে কোটা বাতিলের দাবিতে বরিশালে মানববন্ধন

‘অধিকারবঞ্চিত বেকার সমাজ’—এর ব্যানারে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের বিএম কলেজের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কোটা বাতিলের দাবিতে বরিশালে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের বিএম কলেজের সামনে ‘অধিকারবঞ্চিত বেকার সমাজ’—এর ব্যানারে এ কর্মসূচি শুরু হয়। বেলা দেড়টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলে। কর্মসূচি চলাকালে ব্যস্ততম এই সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, অবিলম্বে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কোটাপদ্ধতি বাতিল করে নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলের মেধা তালিকা অনুযায়ী পুনরায় নিয়োগ দিতে হবে। অন্যথায় নিয়োগপ্রত্যাশীরা দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁদের দাবি আদায় করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।

সমাবেশে বক্তব্য দেন চাকরিপ্রত্যাশী মাহবুবুর রহমান, নিলয় মিত্র, গৌতম ব্যাপারী, উজ্জ্বল হোসেন প্রমুখ। তাঁরা বলেন, করোনার কারণে দুই বছর চাকরির নিয়োগ বন্ধ ছিল। এতে লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার চাকরির বয়সসীমার সন্ধিক্ষণে ছিলেন। এমন অবস্থায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও শুধু কোটার কারণে চাকরি না হওয়ায় এসব বেকারদের জীবন অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতীয় সংসদে কোটা বিলুপ্তের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারপরও কোটা বহাল রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় লাখ লাখ বেকারের জীবনকে বঞ্চিত করেছে। এটা অন্যায়। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।

মানববন্ধনে চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কোটা বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো—প্রাথমিকের ফলাফল বাতিল করে এক ও অভিন্ন কাট মার্কে পুনরায় ফলাফল ঘোষণা করা; কোটা বাতিলের সরকারি পরিপত্র মেনে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা; শিক্ষক নিয়োগে বিদ্যমান নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে দ্রুত সম্পন্ন করে নতুন কোটামুক্ত পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দ্রুত প্রকাশ করা; প্রতিবন্ধীদের কোটা সংরক্ষণ করে পোষ্য কোটাসহ সব ধরনের কোটা বাতিল করা এবং নিয়োগ পরীক্ষায় মেধা তালিকার পাশাপাশি নম্বর প্রকাশ করা।

নিয়োগপ্রত্যাশীরা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেই অনুযায়ী আবেদনপ্রক্রিয়ার পর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় দেড় লাখ আবেদনকারী উত্তীর্ণ হন।

চাকরিপ্রার্থী নিলয় মিত্র প্রথম আলোকে বলেন, ১৪ ডিসেম্বর সহাকারী শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৫০ হাজার নিয়োগ দেওয়ার পরিবর্তে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জনকে নিয়োগ দিয়ে তালিকা প্রকাশ করা হয়। নিয়োগের এই তালিকায় ৮৬ শতাংশই চাকরি হয়েছে নারী, পোষ্য ও বিজ্ঞান কোটায়। এর ফলে ৮০ নম্বরের নিয়োগ পরীক্ষায় ৬০ থেকে ৬৫ নম্বর পেয়েছেন, এমন চাকরিপ্রার্থীদেরও চাকরি হয়নি। অথচ ৪০ নম্বর পাওয়া অনেকে কোটার কারণে চাকরি পেয়েছেন।

মাহবুবুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবার অর্থ ব্যয় করে আমাদের পড়াশোনা করিয়েছে। আমরা কষ্ট করে পড়াশোনা করে ভালো ফলাফল করেছি। চাকরির পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েও আজ আমরা চাকরি পাচ্ছি না কোটার ফাঁদে। এটা কেমন বিচার, তাহলে আমরা পড়াশোনা করছি কেন?’