ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধিতে যাত্রীদের ক্ষোভ

আগে ট্রেনে ঢাকায় যেতে ১৫ টাকা লাগলেও এখন গুনতে হচ্ছে ২০ টাকা। এতে পকেটে টান পড়ছে নিম্ন ও নিম্ন–মধ্যম আয়ের মানুষের।

প্রতিদিন হাজারো যাত্রী দৈনন্দিন প্রয়োজনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে ট্রেনে যাতায়াত করেন। গতকাল সকাল ১০টায় চাষাঢ়া রেলস্টেশনে
ছবি: দিনার মাহমুদ

পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ চলায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল আট মাস। এই সময়ে ওই পথে নিয়মিত যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বেশি ভাড়া নিয়ে বাসে চড়ে যাতায়াত করতে হয় ঢাকায়। ১ আগস্ট থেকে ট্রেন চলাচল আবার শুরু হলেও কোনো ঘোষণা ছাড়াই পাঁচ টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আগে ট্রেনে ঢাকায় যেতে ১৫ টাকা লাগলেও এখন গুনতে হচ্ছে ২০ টাকা। এতে পকেটে টান পড়ছে নিম্ন ও নিম্ন–মধ্যম আয়ের মানুষের। 

হঠাৎ করে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। অবিলম্বে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের জানিয়েছে তারা। ভাড়া না কমানো হলে কঠোর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও এসেছে। 

ভাড়া বাড়ানো প্রসঙ্গে রেলওয়ের নারায়ণগঞ্জ স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আগে মেইল ট্রেনের ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। এখন কমিউটার ট্রেন চালু হওয়াতে ভাড়া ৫ টাকা বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে। এটি রেলের সর্বনিম্ন ভাড়া। বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারে বিভিন্ন সংগঠনের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভাড়া বাড়ানো-কমানোর বিষয়টি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন। পরে এ বিষয়ে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. শহীদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। 

লোকাল মেইল ও কমিউটার ট্রেনের মধ্যে পার্থক্য কী জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রেনের এক চালক বলেন, পার্থক্য শুধু নামে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথের নারায়ণগঞ্জ স্টেশন থেকে কমলাপুরের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। আগে প্রতিদিন এই পথে ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করত। করোনা–সংকটের কারণে প্রতিদিন ট্রেন চলাচল ১৬ জোড়া থেকে কমিয়ে ৮ জোড়ায় আনা হয়। এরপর আর বাড়ানো হয়নি। 

এসব ট্রেনে প্রতিদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, অফিস–আদালতগামী যাত্রী, দিনমজুরসহ পেশাজীবীসহ নিম্ন ও নিম্ন–মধ্যবিত্ত হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। নারায়ণগঞ্জ স্টেশন থেকে কমলাপুর পর্যন্ত সাতটি স্টেশনে ট্রেন থামে এবং সেখানে যাত্রী ওঠানামা করেন। যেকোনো স্টেশনে গেলে ভাড়া যাত্রীপ্রতি ২০ টাকা। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজধানীতে যাতায়াতে ট্রেন, সড়ক ও নৌপথ রয়েছে। তবে ট্রেনেই মানুষ বেশি যাতায়াত করেন। 

রাজধানীর মতিঝিলে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারীর চাকরি করেন শহরের খানপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল হাই। তিনি ভাড়া বৃদ্ধি সম্পর্কে বলেন, ট্রেনের যাঁরা যাত্রী, তাঁরা অধিকাংশ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত। তাঁরা অর্থ সাশ্রয়ের জন্যই ট্রেনে যাতায়াত করেন। কিন্তু ভাড়া বৃদ্ধিতে নিম্ন আয়ের লোকদের আর্থিক খরচ অনেক বেড়ে গেছে। গেন্ডারিয়া থেকে প্রতিদিন ট্রেনে আসেন সরকারি তোলারাম কলেজের উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র তানভীর আহমেদ। তিনি বলেন, ট্রেনে উঠলেই ভাড়া ২০ টাকা। এটা হতে পারে না। 

ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির পর থেকে ভাড়া কমানোর দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’সহ বিভিন্ন সংগঠন। তাদের দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়ে অংশ নিচ্ছেন সাধারণ মানুষও। 

ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নেই জানিয়ে বাসদের জেলা সমন্বয়ক আবু নাঈম প্রথম আলোকে বলেন, আগে থেকেই ট্রেনের ভাড়া বেশি বাড়ানো ছিল। এটি জনগণের ওপর খুবই অন্যায়। এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে গেলেও ভাড়া ২০ টাকা। পরিবহন মাফিয়াদের খুশি করতে ট্রেনের বগি কমানো—যাত্রীসেবার মান বাড়াচ্ছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করা না হলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। 

এ বিষয়ে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনে প্রতিদিন প্রচুর যাত্রী যাতায়াত করেন। রেলওয়ে ট্রেন ও বগির সংখ্যা না বাড়িয়ে উল্টো কমিয়ে অর্ধেক করেছে। রেলওয়ের এসব কর্মকাণ্ড পরিবহন সিন্ডিকেটের স্বার্থে। অবিলম্বে বর্ধিত ভাড়া কমানো ও ট্রেনের সংখ্যা ১৬ জোড়া করা ও প্রতি ট্রেনে বগির সংখ্যা ৯টি করার দাবি জানান রফিউর। দাবি মানা না হলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।