বেতন পেয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে যাচ্ছিলেন খেতে, পথে ট্রাকচাপায় তরুণের মৃত্যু

নিহত মুমিনুল ইসলাম ওরফে আলভী
ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুর শহরে সহকর্মীদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার পথে ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে শহরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়–সংলগ্ন সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত মুমিনুল ইসলাম ওরফে আলভী (২৬) অনলাইন কুরিয়ার সার্ভিস পাঠাওয়ের কর্মী ছিলেন। তিনি পাবনা জেলা সদরের রাধানগর এলাকার মো. নজরুল ইসলামের ছেলে। বছর দেড়েক আগে ফরিদপুর সদরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের ভাষানচরের চরনশীপুর গ্রামের তৌহিদ শেখের মেয়ে তুলি আক্তারকে বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রীকে নিয়ে ফরিদপুর শহরের আলীপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।

মুমিনুলের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বছর আগে কুরিয়ার সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পাঠাওয়ের ফরিদপুর কার্যালয়ে ডেলিভারিম্যান হিসেবে চাকরি নেন। বর্তমানে একই প্রতিষ্ঠানে ফরিদপুর শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন।

পাঠাও ফরিদপুর শাখার ব্যবস্থাপক শামীম বিশ্বাস (২৮) বলেন, ‘গতকাল আমরা বেতন পেয়ে রাত ৯টার দিকে অফিস বন্ধ করি। পরে শহরের নৌফেল চত্বরে অবস্থিত পাঠাওয়ের কার্যালয় থেকে তিনটি মোটরসাইকেলে সহকর্মী নুরে আলম ও মুমিনুলের সঙ্গে আমি বের হই। উদ্দেশ্য ছিল শহরের কোনো রেস্তোরাঁয় খাবার খাব। আমার মোটরসাইকেল সবার আগে ছিল। আমি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পার হয়ে জোরে চালিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর অন্য দুই সহকর্মীকে পেছনে না দেখে দাঁড়িয়ে পড়ি। পরে মুমিনুলের মোবাইলে ফোন করলে সে ফোন না ধরায় আমি পেছনে গিয়ে দেখি বালুভর্তি একটি ট্রাক তাঁকে পেছন থেকে চাপা দিয়েছে।’

সরেজমিন দেখা গেছে, মুজিব সড়কের সুপারমার্কেটের সামনে থেকে পৌরসভা, কারাগার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট তিনটি করে গতিরোধক দেওয়া হয়েছে। এসব গতিরোধকে কোনো সতর্কীকরণ চিহ্ন নেই। এ ছাড়া শহরের ভেতরের প্রধানতম এই সড়কে বালুর ট্রাক চলাচল করে। গতিরোধের ওপর গতি না কমিয়ে দ্রুতগতিতে পার হয় ট্রাকগুলো। এ জন্য ওই সব গতিরোধকে বালু পড়ে জমে থাকে। ওই বালুতে ছেঁচড়ে (স্লিপ কেটে) মোটরসাইকেল, রিকশা, অটো বাইকসহ ছোট ছোট যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

গতকাল রাতে দুর্ঘটনার পর ওই সড়কে এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ গিয়ে উত্তেজিত জনতাকে থামিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শৈলেন চাকমা বলেন, ‘ঘটনার পর স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁদের দাবি, ওই সব ছোট ছোট গতিরোধক উঠিয়ে দেওয়া। আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেব।’

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আবদুল গফফার বলেন, আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে ময়নাতদন্তের পর মুমিনুলের বাবা মো. নজরুল ইসলামের হাতে ছেলের লাশ তুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁর মরদেহ পাবনায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁকে দাফন দেওয়ার কথা। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।