অসম্পূর্ণ খননে আগের অবস্থায় ইছামতী 

খনন করা এলাকায় পলি জমে ও ময়লা-আবর্জনা পড়ে আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে ইছামতি নদী।

দখল ও দূষণে মৃতপ্রায় ইছামতী নদী। গতকাল পাবনা শহরের আটুয়ার হাউসপাড়ায়।
ছবি: প্রথম আলো

মামলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে পাবনা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইছামতী নদী খননের কাজ শেষ হয়নি। চলে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নদীর দুই পাড়ের দখলদার উচ্ছেদ ও খননকাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়নি।

এর ফলে অর্ধেক কাজ শেষ না হতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে ইছামতী খনন ও উচ্ছেদ অভিযান। খনন করা এলাকায় পলি জমে ও ময়লা-আবর্জনা পড়ে আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে নদী।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, মামলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। 

পাউবো পাবনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইছামতী নদীর দখলদার উচ্ছেদ ও খননের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে ২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নদীর দুই পাড়ের ৫ দশমিক ৬৭ কিলোমিটারে দখলদার উচ্ছেদ এবং ৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার নদীখননের ২টি পৃথক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। খনন প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়েছে। অন্যদিকে উচ্ছেদ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। প্রকল্প বাস্তবায়নে পাউবো ১ হাজার ৫৩টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। ৬১০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পরে মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় স্থাপনা উচ্ছেদ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বন্ধ হয় খননকাজও। মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প এলাকা ছেড়ে যায়।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি রুহুল আমিন বলেন, পাউবো সঠিকভাবে খনন এলাকা বুঝিয়ে দিতে পারেনি। এ ছাড়া বারবার কাজ পেছানোয় সময়মতো কাজ করা সম্ভব হয়নি। আর যখন প্রকল্পের বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছিল, তখন ব্যয় ছিল এক রকম। পরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় খরচ বেড়েছে। এর ফলে আর কাজ করা সম্ভব হয়নি।

পাউবোর সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর থেকে ৭০ জনের বেশি দখলদার জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেন। আদালত বিভিন্ন মামলায় স্থগিতাদেশ দেওয়ায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। তবে আইনি লড়াই চলছে।

সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীর কোথাও পানিপ্রবাহ নেই। খনন করা এলাকা পলি জমে ও ময়লা–আবর্জনায় আবার ভরাট হচ্ছে। খনন করা এলাকার বাইরে পুরো ময়লা-আবর্জনায় ভরা। নদীর দুই পাড়ে কিছু এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানের চিহ্ন চোখে পড়ে। কিছু এলাকায় নদীর ভেতরে পাকা স্থাপনা রয়েছে।

লাইব্রেরি বাজার মহল্লার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, উচ্ছেদ অভিযান যেভাবে শুরু হয়েছিল, পরে আর সেভাবে হয়নি। প্রভাবশালী কারও বাড়ি উচ্ছেদ করা হয়নি। এতে মানুষ বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ইছামতী নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম বলেন, ইছামতী নদীর দূষণে শহরের বাসিন্দাদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। উচ্ছেদ অভিযান ও খননকাজ বন্ধ হওয়ায় সবাই হতাশ। 

পাউবোর পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সরওয়ার জাহান বলেন, প্রকল্পের কাজ পুরো শেষ না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৩ শতাংশ বিল দেওয়া হয়েছে। সিএস ম্যাপ ধরে ইছামতী নদীকে দখলমুক্ত করে ৩৮ কিলোমিটার এলাকা খনন করে পুরো নদী প্রবহমান করতে হবে। একটি মেগা প্রকল্প তৈরি করে প্রধান কার্যালয়ে দেওয়া হয়েছে।