শেরপুরে টিআর–কাবিখা–কাবিটা
নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি কাজ
কয়েকটি প্রকল্পের সভাপতি বলছেন, তাঁরা শুধু কাগজে সই করেছেন। কাজ করেছেন অন্যরা।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় কুসুম্বি ইউনিয়নে টিআর, কাবিটা ও কাবিখার নানা প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গ্রামীণ রাস্তা সংস্কারের কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ গত জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। কয়েকটি প্রকল্পের সভাপতি বলছেন, তাঁরা শুধু কাগজে সই করেছেন। কাজ করেছেন অন্যরা।
উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় (পিআইও) সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে কুসুম্বি ইউনিয়নে ২০টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ধরা হয় ১৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া ৭ দশমিক ৪৪১ মেট্রিক টন গম ও ২৭ দশমিক ৪১৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া যায়। এসব প্রকল্প মে মাসে শুরু হয়ে জুনে শেষ হওয়ার কথা।
গত রোববার দেখা যায়, ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে মালিহাটা পলিপাড়া সড়কের কাজ এখনো শেষ হয়নি। প্রকল্পের অধীন পলিপাড়া আবদুস সালামের বাড়ি থেকে মাহবুর বাড়ির দিকের রাস্তায় মাটি ফেলে সংস্কার, ইট বিছানো ও নালা (ইউ ড্রেন) নির্মাণ করার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৩০ মিটার নালা নির্মাণের কাজ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের সভাপতি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত ওয়ার্ডের (১, ২ ও ৩) সদস্য শুশিলা বেগম।
স্থানীয় লোকজন বলেন, যেটুকু ইউ নালা তৈরি করা হয়েছে, তা নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে করা। তাঁরা প্রতিবাদ করায় উল্টো ইউপি সদস্য শাহ আলম সিরাজের লোকজন তাঁদের হুমকি দিয়েছেন। সড়কে যে মাটি কাটা রয়েছে, তা স্থানীয় পরিবারগুলো নিজের টাকায় করেছে। পিআইও অফিস থেকে এখন পর্যন্ত কেউ কাজ দেখতে আসেননি।
প্রকল্পের সভাপতি শুশিলা বেগম বলেন, তিনি শুধু প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন। প্রকল্পের কাজ করছেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহ আলম সিরাজ। এ প্রকল্পের শুরুতেই তাঁর কাছে থেকে কাগজে স্বাক্ষর করে নেওয়া হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, তা তিনি জানেন না।
ইউপি সদস্য মো. শাহ আলম সিরাজ বলেন, এ প্রকল্পের বিপরীতে কত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, তা তাঁর মনে নেই।
ইউনিয়নের দারুগ্রাম পাকার মাথা থেকে সৈকতের বাড়ি পর্যন্ত সড়কে ইট বিছানোর কাজে ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর বেলঘড়িয়া গ্রামে গণেশের বাড়ি থেকে পাকার মাথা পর্যন্ত সড়কও সোলিং করা হয়েছে। এ প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ৯ দশমিক ৯৭২ মেট্রিক টন চাল। এ দুটি প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবুল হোসেন।
আবুল হোসেন বলেন, ওই দুটি প্রকল্প কাবিখার প্রথম কিস্তির। শুধু প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন তিনি। কাগজপত্রে স্বাক্ষর করা ছাড়া তাঁর আর কোনো দায়িত্ব ছিল না। এ প্রকল্পের সদস্যসচিব ছিলেন কুসুম্বি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী। প্রকল্পের বিপরীতে কতটুকু চাল উত্তোলন করা হয়েছে, তা–ও তিনি জানেন না।
আবুল হোসেন আরও বলেন, সড়কের কতটুকু জায়গায় ইট বিছানো হবে, তা তাঁকে জানানো হয়নি। যেটুকু কাজ হয়েছে, তা খুবই নিম্নমানের ইট দিয়ে। সড়কের ইট এখনই ভেঙে যাচ্ছে। এতে গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাবে।
এ বিষয়ে জুলফিকার আলী বলেন, গুদাম থেকে চাল তুলে বিক্রি করে তাঁকে ওই দুটি প্রকল্পের বিপরীতে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। বরাদ্দকৃত চালের বাজারমূল্য কত, তা–ও তিনি জানেন না। এই টাকা দিয়ে তিনি যেটুকু পেরেছেন কাজ করেছেন।
মিঠাপুকুর মসজিদ থেকে কাশিপাড়া মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ও ইট বিছানোর জন্য বরাদ্দ ছিল ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের (৪, ৭ ও ৮) সদস্য লাভলী আক্তার। স্থানীয় তিনজন বলেন, এ কাজে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। কাজ এখনো শেষ হয়নি।
লাভলী আক্তার বলেন, তিনি সভাপতি থাকলেও এ কাজ করেছেন তাঁদের পরিষদের সচিব নজরুল ইসলাম। তবে তিনি শুনেছেন, এখনো কিছু অংশে ইট বিছানোর কাজ বাকি আছে। এ বিষয়ে ইউপি সচিব নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাসছুন্নাহার শিউলী বলেন, গত অর্থবছরে উপজেলায় এমন অন্তত ৪০০টি প্রকল্প রয়েছে। সব প্রকল্পের কাজ ঘুরে দেখা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। যেসব প্রকল্পের সভাপতি কাজ না করে টাকা উত্তোলন করেছেন, তাঁদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ময়নুল ইসলাম বলেন, এমন প্রকল্পে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই ইউপি সচিবের। যদি কেউ এমনটি করে থাকেন, তাহলে প্রকল্প কমিটির সভাপতির লিখিত অভিযোগ পেলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।