চারটি গ্রামের মানুষের ভরসা নড়বড়ে সাঁকো 

স্থানীয় উদ্যোগে ওই সাঁকো তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও তা পূরণ হয়নি।

দীর্ঘদিন ধরে খালের ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ঝুঁকি নিয়ে শিশুশিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীকে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতে হয়
ছবি: প্রথম আলো

দুদুখান পাড়া খালের এক পাড় থেকে আরেক পারে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। স্থানীয় উদ্যোগে ওই সাঁকো তৈরি হয়েছে। চারটি গ্রামের চার-পাঁচ হাজার মানুষ সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও তা পূরণ হয়নি।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার জৈনদ্দিন সরদার পাড়া ও সাহাজদ্দিন মাতুব্বর পাড়ার পাশ দিয়ে খালটি বয়ে গেছে ফরিদপুর জেলার দিকে। ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের গঞ্জুর মাতুব্বর পাড়া ও দুর্গাপুর গ্রামের মানুষও ওই নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে পার হন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সীমানা জটিলতাসহ জনপ্রতিনিধিদের অনাগ্রহের কারণে খালের ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেই।

গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা বছর এই খালে পানি থাকে। খালটি স্থানীয় চারটি গ্রামকে পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ায় ভাগ করেছে। এসব পরিবারের যাতায়াতের বড় সমস্যা খাল। স্বাধীনতার আগে থেকেই গ্রামবাসী সাঁকো তৈরি করে যাতায়াত করেন। দীর্ঘদিনেও সেতু নির্মাণ করা হয়নি। সাঁকোটির পূর্ব পাশে রয়েছে জৈনদ্দিন সরদার পাড়ার পূর্ব অংশ ও পশ্চিমে জৈনদ্দিন সরদার পাড়ার বাকি অংশ এবং সাহাজদ্দিন মাতুব্বর পাড়া। সাঁকোর দক্ষিণে খালের পূর্বে ফরিদপুর সদর গঞ্জুর মাতুব্বর পাড়া একাংশ এবং পশ্চিমে গঞ্জুর মাতুব্বর পাড়া বাকি অংশ ও দুর্গাপুর গ্রাম।

খালের পূর্ব পাশে সাঁকোসংলগ্ন দক্ষিণে অবস্থিত উসমান জমুদ্দারের বাড়ি। তিনি বলেন, ‘প্রায় ৬০ বছর ধরে এখানে বাপ-চাচার বাড়ি। দেশ স্বাধীনের আগে থেকে দেখছি বাঁশের সাঁকো। সীমানা নিয়ে দুই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাপজোখের পর দক্ষিণে আমি পড়েছি ফরিদপুরের ঈশান গোপালপুর ইউপির গঞ্জুর মাতুব্বর পাড়ার মধ্যে। আমার আরেক ভাই পড়েছে গোয়ালন্দর উজানচর ইউপির জৈনদ্দিন সরদার পাড়ার মধ্যে। আলাদা ইউনিয়নের বাসিন্দা হলেও চার গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা এই সাঁকো।’

জৈনদ্দিন সরদার পাড়ার হাসেম মণ্ডল বলেন, ‘প্রায় ৭০ বছর ধরে বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করছি। ছোটবেলা থেকে বাপ-চাচাদের সাঁকো তৈরি করে চলতে দেখেছি। এখনো তা–ই দেখছি। দুই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ অঞ্চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আসেন। তবে সীমান্তবর্তী হওয়ায় কেউ সেতু নির্মাণের ব্যাপারে আগ্রহ দেখান না।’

স্থানীয় সাহাজদ্দিন মাতুব্বর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না থাকায় এলাকার শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো আসতে পারে না। শিক্ষার্থীসহ চার গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ভোগান্তিতে আছেন। কোনো অনুষ্ঠান, প্রয়োজনে রিকশা, ভ্যান বা গাড়ি খাল পাড়ে রাস্তায় রাখতে হয়। জমি আবাদ করা, ফসল আনা–নেওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন লোকজন। এখানে জরুরি ভিত্তিতে একটি সেতু নির্মাণ করা দরকার। 

উজানচর ইউপির চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, এলাকার চার-পাঁচ হাজার মানুষ ওই খাল পার হয়ে নিয়মিত চলাচল করেন। এলাকাবাসীর যাতায়াতের সুবিধার্থে উপজেলা পরিষদ থেকে ইটের রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ওই খালের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য এলজিইডির মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। 

উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান বলেন, সম্প্রতি প্রায় ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাব অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এটি পাস হলে ওই খালের ওপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।