ঢাকায় সহকর্মীর গুলিতে নিহত পুলিশ সদস্য মনিরুলের দাফন হলো নেত্রকোনায়

পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলামের জানাজায় তাঁদের স্বজন, শুভানুধ্যায়ী ও গ্রামের মানুষেরা অংশ নেন। আজ সকাল ১০টার দিকে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের ঈদগাহ মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর কূটনীতিক এলাকায় গুলিতে নিহত পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলামের (২৭) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ সোমবার নিহত ব্যক্তির গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায় বিষ্ণুপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

এর আগে সকাল ১০টার দিকে বিষ্ণুপুর গ্রামের ঈদগাহ মাঠে মনিরুলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নেত্রকোনা পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। নিহত মনিরুল বিষ্ণুপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত শামসুল হকের ছেলে। মনিরুলরা তিন ভাই, তিন বোন। তিনি সবার ছোট।

আজ সকালে মনিরুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তাঁর স্ত্রী তানিয়া আক্তার দেড় বছরের শিশুসন্তান তাহারা হককে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছিলেন। মনিরুলের ভাই, স্বজনেরাও তখন কাঁদছিলেন। মনিরুলের বৃদ্ধ মা দেলোয়ারা ছেলের শোকে স্তব্ধ হয়ে বারান্দায় বসে ছিলেন। এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের বাড়িতে ভিড় করেন। তাঁরা শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন।

নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায় বিষ্ণুপুরে পারিবারিক কবরস্থানে পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে দাফন করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

মনিরুলের প্রতিবেশী তুহিন ইসলাম বলেন, মনিরুল খুবই ভালো লোক ছিলেন। সব সময় হাসিমুখে থাকতেন। সুন্দর ব্যবহারের জন্য এলাকার সবাই তাঁকে পছন্দ করতেন।
মনিরুলের বন্ধু হাসিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সমবয়সী বন্ধুবান্ধব সবার সঙ্গে মনিরুলের ভালো সম্পর্ক ছিল। প্রিয় এই বন্ধুর এভাবে মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। আমরা মনিরুলের ঘাতকের দ্রুত বিচার আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।’

নেত্রকোনার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. ফয়েজ আহমেদ মনিরুলের পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়ে জানান, এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে। ইতিমধ্যে হত্যা মামলার আসামি কনস্টেবল কাউসার আলীকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া পুলিশ মনিরুলের পরিবারের পাশে থাকবে বলে জানান এসপি।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মনিরুল ইসলাম ২০১৪ সালে নেত্রকোনার আঞ্জুমান সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে ময়মনসিংহে একটি বেসরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে চতুর্থ সেমিস্টার পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তিনি ২০১৬ সালের শেষের দিকে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। তিন বছর আগে পূর্বধলা উপজেলার তানিয়া আক্তারকে বিয়ে করেন। মনিরুলের ভাই মাহবুব হক পুলিশের একজন সদস্য। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত।

শনিবার রাজধানীর গুলশান-বারিধারার কূটনীতিক এলাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে দায়িত্ব পালন করা নিয়ে কনস্টেবল মনিরুলের সঙ্গে তাঁর সহকর্মী কাউসার আলীর দ্বন্দ্ব হয়। ওই দিন দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে কাউসার মনিরুলকে গুলি করে হত্যা করেন। এ সময় জাপান দূতাবাসের একজন গাড়িচালক (সিভিল স্টাফ) গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় কাউসারের বিরুদ্ধে মনিরুলের ভাই মাহবুবুল হক হত্যা মামলা করেন।