‘তন্ত্রমন্ত্রের খেলা’ দেখতে ছোট যমুনার পাড়ে মানুষের ঢল

ঐতিহ্যবাহী ‘পাতা খেলা’ দেখতে ছোট যমুনা নদীর পাড়ে উৎসুক দর্শকের ভিড়। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কাটলাবাজার এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কেউ বাড়ির ছাদে, কেউ গাছের মগডালে। কেউ আবার সামনে থাকা দর্শকের ঘাড়ের ওপর ভর দিয়ে সামনে দেখার প্রাণবন্ত চেষ্টা করছেন। উৎসুক দর্শকদের দৃষ্টি ছোট যমুনা নদীর পাড়ের সবুজ মাঠে। মাঠের চারপাশে থেকে থেকে বেজে উঠছে দর্শকদের করতালি। আবার কখনো ‘হুররে...’ আওয়াজ।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কাটলাবাজার-সংলগ্ন ছোট যমুনা নদীর পাড়ে দেখা যায় এ চিত্র। সেখানে দর্শকে ভরপুর মাঠের চার কোণে দাঁড়িয়ে ‘পাতাকে’ কাছে টানতে মন্ত্র পড়ছেন গুনিনের দল। তন্ত্রমন্ত্রের বলে ‘পাতা’ নামে ডাকা খেলোয়াড়দের চলছে হাতের কাঁপুনি। গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী এ খেলা স্থানীয় লোকজনের কাছে ‘পাতা খেলা’ নামে পরিচিত।

বিরামপুরের মাগুরাপাড়া, উত্তর কাটলা, চৌঘুরিয়া, খট্টামাধবপাড়া, কেশবপুর, বলরামপুর, দামোদরপুর এবং গাইবান্ধা জেলা থেকে অতিথি খেলোয়াড়দের আটটি দল এতে অংশ নেয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী হাসান মাহমুদ এ খেলার আয়োজন করেন। এ খবরে কয়েক হাজার উৎসুক দর্শকের ঢল নামে নদীর পাড়ে।

সন্ধ্যার পরও ছোট যমুনার পাড়ে চলছিল ‘তন্ত্রমন্ত্রের খেলা’
ছবি: প্রথম আলো

মাঠে গিয়ে দেখা গেল, সর্বোচ্চসংখ্যক পাতাকে নিজের আচলিতে (সীমানায়) টানতে গণকেরা মন্ত্র জপছেন। মাঠের মাঝখানে থাকা পাতা মাঠের কোণের একজন গণকের মন্ত্রের টানে তাঁর কাছে গেলেও অন্য গণক সেই পাতাকে নিজের কাছে টানতে আরও বেশি জোরে মন্ত্র পড়ছেন। চলছে টানটান উত্তেজনা। দর্শকদের হইহুল্লোড় আর আনন্দ-উত্তেজনায় সরগরম মাঠ।

পাতা খেলাকে কেন্দ্র করে মাঠের চারপাশে বসেছে ফুচকা, চটপটি, জিলাপি, চিংড়ি চপ, পেঁয়াজু, বাদাম, চা আর মুখরোচক ঝালমুড়ির দোকান। এ ছাড়া ছোটদের আকৃষ্ট করতে বসেছে রকমারি খেলনার পসরা।

খেলায় জাহাঙ্গীর আলম, মোস্তফা জামান, মইনুল ইসলাম, আফতাব উদ্দিন, বেনী, ইফাজ উদ্দিন ও রাবেয়া আক্তারসহ অনেকে গণক হিসেবে অংশ নেন। অপর দিকে বিভিন্ন দল থেকে ফজলে রাব্বি, জামান, এমাজ উদ্দিন, আছাব উদ্দিন, নূরজামান ও ফয়সের আলী পাতা হয়ে অংশ নেন।

অনেকের সঙ্গে খেলা দেখতে এসেছিলেন উপজেলার উত্তর কাটলা গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাতা খেলা গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য। প্রতিবছর শীতের শুরুতে এলাকায় এ খেলার আয়োজন করা হয়। সারা দিনের ক্লান্তি ভুলে দল বেঁধে পাতা খেলা দেখতে এসেছেন। খুব আনন্দ নিয়ে খেলা উপভোগ করেছেন।

খেলার আয়োজক হাসান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, সীমান্ত এলাকার খেটে খাওয়া মানুষদের সুস্থ বিনোদন দিতেই এ খেলার আয়োজন করা হয়েছে। এলাকার কর্মব্যস্ত মানুষ সারা দিনের ক্লান্তি শেষে এ পাতা খেলাকে আনন্দসহকারে উপভোগ করেছেন। ভবিষ্যতেও এ আয়োজন অব্যাহত থাকবে।

এ খেলার চূড়ান্ত পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয় উত্তর কাটলার দল। রানারআপ হয় চৌঘুরিয়া দল।