পিরোজপুরে এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীবের বিরুদ্ধে যত মামলা

এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসান ও তাঁর ভাই আবুল বাশার খানকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকার কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে হাজির করা হয়েছিল
ফাইল ছবি

পিরোজপুরে এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আদালতে ও থানায় মোট ৭৩টি মামলা হয়েছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে রাগীব আহসান ও তাঁর তিন ভাইকে গ্রেপ্তারের পর বিভিন্ন সময়ে এসব মামলা করেন প্রতিষ্ঠানটির আমানতকারী ও কর্মীরা।

সর্বশেষ গত শুক্রবার ১৭ মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি রাগীব আহসানের বাবা ও প্রতিষ্ঠানটির উপদেষ্টা আবদুর রব খানকে (৭০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন

এহসান গ্রুপের কর্মী ও একটি মামলার বাদী পিরোজপুর সদর উপজেলার মূলগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা হারুন আর রশিদ বলেন, রাগীব ও তাঁর স্বজনদের বিরুদ্ধে আদালতে ও থানায় বিভিন্ন সময়ে মামলা করেছেন গ্রাহক ও কর্মীরা। সব মামলার তথ্য তাঁদের কাছে নেই। তবে ৭৩টি মামলার তথ্য তাঁরা জানেন।

থানা–পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসানসহ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিরুদ্ধে ১৯টি মামলার তথ্য আছে পিরোজপুর সদর থানা–পুলিশের কাছে। তবে মামলার সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ জ ম মাসুদুজ্জামান। গ্রাহকদের ওই সব মামলায় রাগীব ও তাঁর ভাই আবুল বাশার খান, মাহমুদুল হাসান ও খাইরুল ইসলাম ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কারাগারে আছেন। রাগীবের আরেক ভাই শামীম হাসান ও বাবা আবদুর রব খান দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। শুক্রবার আবদুর রব খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আবদুর রব খানের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। ২০২১ ও ২০২২ সালে পিরোজপুর ও গাজীপুরের আদালতে তাঁদের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পিরোজপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাগীব আহসানের বিরুদ্ধে আদালতে করা পাঁচটি ও স্থানীয় থানায় করা একটি মামলা তদন্তভার পায় পিবিআই। চারটি মামলায় রাগীবসহ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পিবিআই। ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর পিরোজপুর সদর থানায় অর্থ পাচার আইনে এহসান গ্রুপের বিরুদ্ধে ১০১ কোটি টাকা পাচারের মামলা করে সিআইডির পরিদর্শক মীর কাশেম। মামলায় রাগীব আহসান, তাঁর স্ত্রী সালমা আহসান, ভাই আবুল বাশার খান, খায়রুল ইসলাম, শামীম হাসান, মাহমুদুল হাসান, বোনের স্বামী নাজমুল ইসলামকে আসামি করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপেক্ষিতে ২০২২ সালের ১৩ জুন এহসান গ্রুপের সব স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করার আদেশ দেন পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

আরও পড়ুন

পিরোজপুর জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি খান মো. আলাউদ্দিন বলেন, আদালত রাগীব ও তাঁর সহযোগীদের নামে থাকা ৪৫টি দলিল ক্রোকের নির্দেশ দিলে ১৭৭ শতাংশ জমিসহ এহসান গ্রুপের প্রধান কার্যালয় ও জেলা শহরের শেরে বাংলা পাবলিক লাইব্রেরি মার্কেটের দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্রোক করা হয়।

সদর থানার ওসি আ জ ম মাসুদুজ্জামান বলেন, গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলায় তথ্য আছে। তবে মামলার সংখ্যা আরও অনেক বলে তাঁরা শুনেছেন।

গ্রাহকের টাকা পাচার

সিআইডির অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া ১০১ কোটি টাকা সরিয়ে ফেলেছে। এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড ও এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের নামে গ্রুপটি গ্রাহকের কাছ থেকে অধিক মুনাফা দেওয়ার কথা বলে ওই টাকা সংগ্রহ করে। ২০০৮ সাল থেকে পিরোজপুর, বাগেরহাট ও ঝালকাঠি জেলার হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ওই টাকা তোলে প্রতিষ্ঠান দুটি। এ জন্য অবৈধভাবে জমা পাস বই ও আমানত গ্রহণের রশিদ ব্যবহার করা হতো। তবে কোম্পানির নিবন্ধন (রেজিস্ট্রার) খাতার তথ্য অনুযায়ী তাঁদের সদস্য আছে ৪২৭ জন।

তবে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বলছেন, এহসান গ্রুপ গ্রাহকের হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ প্রতিষ্ঠানে ১ হাজারের বেশি কর্মী ও কয়েক হাজার গ্রাহক ছিল।

আরও পড়ুন

এহসান গ্রুপের কর্মী আক্তারুজ্জামান বলেন, এহসান গ্রুপের সম্পদ বিক্রি ও রাগীবের পাচার করা টাকা উদ্ধার করে সরকার ও আদালতকে গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেন, রাগীব, তাঁর পরিবারের সদস্য এবং এহসান গ্রুপের নামে ব্যাংকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা নেই। প্রতিষ্ঠানের নামে কেনা সম্পদ ও স্থাপনা বিক্রি করে গ্রাহকের সব টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হবে না।

জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি খান মো. আলাউদ্দিন বলেন, আদালতের নির্দেশে এহসান গ্রুপের সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, পরিচালক ও উপদেষ্টাদের নামে আদালতে করা মামলা বিচারাধীন। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গ্রাহকের টাকা ফেরত পাওয়ার সুযোগ নেই।