দরপত্র ছাড়াই চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ 

যেখানে দ্রুত সড়ক সংস্কার প্রয়োজন, সেখানে ভাওয়াল দিঘির পাড়ের সৌন্দর্যবর্ধন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে পৌরসভা।

দরপত্র ছাড়াই ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মধ্যপাড়ার ভাওয়াল দিঘির (মহেশ্বর দিঘির) পাড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। মঙ্গলবার দুপুরে।
ছবি: শাহাদৎ হোসেন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ৭০ শতাংশ রাস্তা বেহাল। তহবিল-সংকটের কারণে রাস্তাঘাট ও নালার উন্নয়ন করতে পারছে না পৌরসভা। সেখানে দরপত্র ছাড়াই শহরের মধ্যপাড়ার ভাওয়াল দিঘির (মহেশ্বর দিঘির) পাড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছে পৌরসভা। বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। 

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কাউছার আহমেদ বলেছেন, জরুরি ভিত্তিতে কাজটি করা হচ্ছে। পরে রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন (আরএফপি) প্রক্রিয়ায় সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ দেখানো হবে। এই প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ ছয় লাখ টাকার কাজ করা যায়।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় ২৫৭ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে পাকা সড়ক ২২৬ কিলোমিটার ও কাঁচা সড়ক ৩১ কিলোমিটার। নালা রয়েছে ১৩১ কিলোমিটার। কাঁচা নালা ২৮ কিলোমিটার ও পাকা নালা ১০৩ কিলোমিটার। যার মধ্যে মাত্র ২৫ কিলোমিটার নালায় ঢাকনা আছে।

পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল কুদ্দুস এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। পুকুরটির মালিক পৌরসভা। সেটি দখল হয়ে যাচ্ছে। পুকুর রক্ষা করতেই সেখানে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হচ্ছে।’

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলা শহরের মঠের গোড়া থেকে বর্ডার বাজার পর্যন্ত সড়কের পাশে মধ্যপাড়া এলাকায় মহেশ্বর দিঘি অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে এটি ভাওয়াল দিঘি নামে পরিচিত। দিঘির উত্তর-পশ্চিম দিকে একটি মসজিদ আছে। মঠের গোড়া থেকে বর্ডার বাজার পর্যন্ত সড়কজুড়ে খানাখন্দ ও বেহাল। সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। কিন্তু এই সড়কসহ পৌরসভার অধিকাংশ সড়কে খানাখন্দ ও গর্তের জন্য পৌরবাসীকে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যেখানে দ্রুত সড়ক সংস্কার প্রয়োজন, সেখানে ভাওয়াল দিঘির পাড়ের সৌন্দর্যবর্ধন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে পৌরসভা। সেটিও দরপত্র ও কোটেশন আহ্বানের নিয়ম না মেনেই সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হচ্ছে।

মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, এখানে একাধিক নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেসব ভবনের মালিকদের সুবিধা দিতে প্রয়োজন ছাড়াই সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হচ্ছে। এখানে বিনা প্রয়োজনে বিশাল গেট নির্মাণ করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, মধ্যপাড়ার মহেশ্বর (ভাওয়াল) দিঘির পূর্ব-উত্তর দিকে একটি বিশাল ফটক নির্মাণ করা হয়েছে। দিঘির পূর্ব ও উত্তর দিকে ইট বিছিয়ে রাস্তার নির্মাণকাজ চলেছে। দিঘির উত্তর পাশে নয়টি পাকা বেঞ্চও তৈরি করা হয়েছে।

জেলার সচেতন নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম শিবলি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনিয়মের মাধ্যমে কাজটি করা হচ্ছে বলে প্রতিবাদও জানাচ্ছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরকে আমরা নোংরা শহর বলে থাকি। শহরের রাস্তাঘাট খুবই খারাপ। কোনো উন্নয়নের দিকে না গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে এ উন্নয়ন আসলেই তীব্র নিন্দা জানানোর মতো বিষয়। আমরা নাগরিকেরা কার কাছে এমন জিম্মি হয়ে যাচ্ছি যে ব্যক্তি উন্নয়নের কাছে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি।’

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, জেলা শহরের মধ্যপাড়ার মহেশ্বর দিঘির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে পৌরসভার মামলা চলছে। পৌরসভাই এ দিঘির মালিক। কিন্তু স্থানীয় ব্যক্তিরা ভাওয়াল দিঘির উত্তর-পশ্চিম দিকে মসজিদ নির্মাণের মাধ্যমে জায়গা দখলের পাঁয়তারা করছেন। এ জন্য পুকুর রক্ষার্থে সেখানে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু করেছে পৌরসভা। এতে পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হতে পারে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। তবে কাজটির জন্য কোনো ধরনের দরপত্র বা কোটেশন আহ্বান করা হয়নি।

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কাউছার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, পৌর পরিষদের সিদ্ধান্তে দিঘির পাড়ে পায়ে হাঁটার রাস্তা করা হচ্ছে। চারপাশে রাস্তা নির্মাণ করা হবে। এ সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। পৌরসভার বিভিন্ন সড়কের সংস্কারকাজ দ্রুত শুরু হবে। 

পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আ. কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, দিঘির এক কোনায় সাড়ে চার শতক জায়গায় মসজিদ রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় ব্যক্তিরা সেখানে সাড়ে ১২ শতাংশ জায়গা দখল করে মসজিদ সম্প্রসারণ করতে চাইছেন। পশ্চিম দিকে তাঁরা দুই শতক জায়গাও দখল করেছেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান একবার হয়ে গেলে তা আর ভাঙা যায় না। জায়গা উদ্ধারে তাৎক্ষণিকভাবে দখল বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে কাজটি শুরু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি।