কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী পদ্মা নদীর দুর্গম চরে জমি দখলকে কেন্দ্র করে গুলি ও কুপিয়ে দুজনকে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে নিহত আমান মণ্ডলের বাবা মিনহাজ মণ্ডল দৌলতপুর থানায় মামলাটি করেন। অন্যদিকে একই ঘটনায় অন্য পক্ষের আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার হলেও এখনো কোনো মামলা হয়নি।
মামলায় ‘কাকন বাহিনীর’ প্রধান কাকনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ৩০ জনকে আসামি করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, মামলার কোনো আসামিকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
গত সোমবার দুপুরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, রাজশাহীর বাঘা ও নাটোরের লালপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজার নিচ খানপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত হন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আরও দুজন গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গোলাগুলির খবর পেয়ে কাছের বাঘা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ গুলির খোসা, কয়েকটি তাজা গুলি ও রক্তমাখা ধারালো অস্ত্র জব্দ করে পুলিশ। তবে ঘটনাস্থলটি কোন থানার আওতাধীন, তা নির্ধারণ করতে রাজশাহী ও খুলনা রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গতকাল মঙ্গলবার সারা দিন মাঠে থাকেন, যার ফলে মামলা কার্যক্রমে বিলম্ব হয়। পরে নির্ধারিত হয়, ঘটনাস্থল কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার আওতাধীন।
সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নিচ খানপাড়া এলাকার মিনহাজ মণ্ডলের ছেলে আমান মণ্ডল (৩৬) ও শুকুর মণ্ডলের ছেলে নাজমুল মণ্ডল (২৬)। নিহত ব্যক্তিরা মূলত কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বাসিন্দা ছিলেন; নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তাঁরা বাঘার নিচ খানপাড়ায় অস্থায়ীভাবে বসবাস করতেন।
অন্যদিকে গতকাল সকালে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা পদ্মা ঘাট থেকে লিটন (৩০) নামের আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পাবনার ঈশ্বরদীর নৌ পুলিশ। নিহত লিটনের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তিনি ওই ইউনিয়নের ঘোষপাড়া এলাকার মৃত জামরুল ঘোষের ছেলে। পেশায় তিনি প্রসাধনসামগ্রীর ব্যবসায়ী ছিলেন এবং কাকন বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচিত। এ ঘটনায় এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, অভিযুক্ত কাকন বাহিনীর প্রধান কাকনের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের মাঝদিয়াড় গ্রামে। তিনি পদ্মা নদীর বালুমহাল ও চরাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি বালুমহাল দখল ও আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে গড়ে তোলেন ‘কাকন বাহিনী’। বর্তমানে এ বাহিনীর সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ৪০–এর বেশি।
জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, কাল (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে সারা দিন পদ্মার চরে কুষ্টিয়া অংশে সাঁড়াশি অভিযান চালাবে পুলিশ। শতাধিক পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি অভিযানে র্যাব সদস্যরাও থাকবেন।