টাঙ্গাইলে সাবরেজিস্ট্রার ও তাঁর স্বজনদের সোয়া ১১ কোটি টাকার সম্পদ জব্দের প্রক্রিয়া শুরু

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে কর্মরত টাঙ্গাইলের এক সাবরেজিস্ট্রার ও তাঁর স্বজনদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দের প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতিমধ্যে আদালতের অনুমতি নিয়ে দুদক তাঁদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ও স্থাবর সম্পদ জব্দ করে প্রশাসক নিয়োগ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে।

জব্দ করা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মূল্য ১১ কোটি ২৯ লাখ ৮৮ হাজার ৮১৬ টাকা। দুদকের টাঙ্গাইল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এবং ওই সাবরেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলার অনুসন্ধান কর্মকর্তা নুর আলম গতকাল শনিবার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

অভিযুক্ত সাবরেজিস্ট্রারের নাম নুরুল আমিন তালুকদার। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সাবরেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত নুরুল আমিনের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার লোকেরপাড়া গ্রামে। তাঁর স্ত্রীর নাম নুরুন্নাহার খানম এবং মেয়ের নাম জিনাত তালুকদার। তাঁদের তিনজনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৫ কোটি ৮৫ লাখ ১২ হাজার ৩৭৬ টাকার সন্ধান পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া টাঙ্গাইল শহর ও ভূঞাপুরে তাঁদের ৫ কোটি ৪৪ লাখ ৭৬ হাজার ৪৪০ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি আছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, সাবরেজিস্ট্রার নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে গত বছরের ২৩ জুলাই টাঙ্গাইলের আদালতে মামলা করে দুদক। এরপর মামলার অনুসন্ধান কর্মকর্তা নুর আলমের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার টাঙ্গাইলের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. নাজিমুদ্দৌলা সাবরেজিস্ট্রার নুরুল আমিন, তাঁর স্ত্রী নুরুন্নাহার খানম ও মেয়ে জিনাত তালুকদারের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দের অনুমতি দেন।

দুদক কর্মকর্তা নুর আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর ওই সাবরেজিস্ট্রার ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করে প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

দুদক ও মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দুদক তদন্ত করে দেখেছে, নুরুল আমিন তালুকদারের ৪১ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের স্থাবর ও ১৫ লাখ ২৬ হাজার ৮৭৮ টাকা ব্যাংকে জমা আছে, যা তাঁর মোট আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। কিন্তু তিনি তাঁর ব্যাংক হিসাব থেকে স্ত্রী নুরুন্নাহার খানম ও মেয়ে জিনাত তালুকদারকে অর্থ পাচারের মাধ্যমে লেনদেন করেছেন।

দুদকের অনুসন্ধানে নুরুন্নাহার খানমের নামে টাঙ্গাইল শহর ও ভূঞাপুর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৯৪০ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাব নম্বরে ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৩ হাজার ৩৬৮ টাকা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে জিনাত তালুকদারের নামে টাঙ্গাইল শহরে ৭৭ লাখ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ, ২৯ লাখ টাকা মূল্যের প্রাইভেট কার ও বিভিন্ন ব্যাংকে ১ কোটি ২৪ লাখ ৮২ হাজার ১৩৩ টাকা জমা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেগুলোর বৈধ কোনো উৎস পায়নি দুদক।