তিন দিন ধরে বৃষ্টি বন্ধ থাকলেও নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। পানি নামছে ধীরগতিতে। জেলার বন্যাকবলিত আটটি উপজেলার মধ্যে সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সদর, চাটখিল, সোনাইমুড়ী ও কবিরহাট উপজেলার অধিকাংশ সড়ক কোথায়ও হাঁটুসমান বা কোথায়ও হাঁটুর পানির নিচে। বেশির ভাগ বসতঘরে এখনো পানি। এ পরিস্থিতিতে বন্যার পানি নামার যে গতি, তাতে আগামী এক সপ্তাহেও ভোগান্তি কমার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন বন্যার্ত লোকজন।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নোয়াখালী অঞ্চলের লোকজন বন্যার সঙ্গে তেমন একটা পরিচিত নন। কিন্তু এখানকার বেশির ভাগ খাল ও পানি নিষ্কাশনের পথগুলো ভরাট ও বেদখল হয়ে যাওয়ার কারণে এবারের অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে ধেয়ে আসা পানির চাপ নিতে পারেনি। এ কারণে এখানে প্রথমত জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, পরবর্তী সময়ে তা ভয়াবহ বন্যায় রূপ নিয়েছে। শুধু তাই নয়, গেল তিন দিন জেলায় কোনো বৃষ্টি না হলেও বন্যা পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে না। এতে একদিকে বন্যা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। অন্যদিকে বন্যার ক্ষতির পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে।
গতকাল শনিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সদর উপজেলার নেওয়াজপুর, কাদিরহানিফ ও বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এলাকাগুলোর সব সড়ক এখনো প্রায় হাঁটু পানির নিচে। সড়কের আশপাশের বাড়িসহ প্রত্যন্ত এলাকার বেশির ভাগ বাড়িই এখনো পানিতে জলমগ্ন হয়ে আছে। তবে কিছু কিছু বসতঘর থেকে পানি নামলেও সেগুলো এখনো বসবাস উপযোগী হয়নি। এ কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লোকজনও এখনই বাড়ি ফিরতে চাইছেন না।
কথা হয় একলাশপুর ইউনিয়নের গাবুয়া টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে আশ্রয় নেওয়া গৃহিণী শাহেদা আক্তারের সঙ্গে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তিনি ভেজা কাপড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরছিলেন। বাড়ি থেকে বন্যার পানি নেমেছে কি না, জানতে চাইলে প্রথম আলোকে বলেন, উঠানে এখনো হাঁটুপানি। তবে ঘরের মেঝে থেকে পানি নেমে গেছে। কিন্তু ঘরের কাঁচা ভিটা পুরোটা নষ্ট হয়ে গেছে। থাকার উপায় নেই। তাই আরও কমপক্ষে দুই-তিন দিন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হবে।
বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সারা দিনে বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘুরেছেন। সব এলাকার অবস্থা প্রায় একই। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় বেগমগঞ্জের একাধিক খাল পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করেছেন। তবু পানি নামছে ধীরগতিতে। এতে লোকজনের কষ্ট যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণও। একই কথা বলেন চাটখিল উপজেলার ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিনও। তিনি বলেন, বন্যার পানি অনেকটা স্থির হয়ে আছে। পানি নামছে অত্যন্ত ধীরগতিতে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান খান বলেন, কিছু পানি কমার কারণে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যাও কিছু কমেছে। বর্তমানে ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৩০০ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। আর আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ২ লাখ ৩১ হাজার ২৬৩ জন। মৃতের সংখ্যা ১ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ জনে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭১৮ দশমিক ৫ মেট্রিক টন চাল ও ৪৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।