‘চোর চোর’ বলে গৃহবধূর চিৎকার, দুজনকে কুপিয়ে পালাল দুর্বৃত্তরা
প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে রাত সাড়ে তিনটার দিকে গৃহবধূ রিনা আক্তার ঘরের দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে দেখেন, গোয়ালঘরের মুখে কয়েকজন ব্যক্তি। টর্চলাইট হাতে দলটির অদূরে একটি পিকআপ ভ্যান ও আরও কয়েকজন। এ সময় ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার করে আবার ঘরের ভেতরে ঢুকতেই রিনার পিছু নেয় দলের সদস্যরা।
স্ত্রীর চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে বের হতেই স্বামী জামাল খাঁকে আক্রমণ করে তারা। এ সময় দলটিকে আটকাতে পরিবারের সদস্যরা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। জামাল খাঁ ও তাঁর দুই ভাইকে আহত করলেও শেষ পর্যন্ত গরু না নিয়েই পালিয়ে যায় চক্রটির সদস্যরা।
গতকাল রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সৈয়দভাকুরী গ্রামের আবদুস ছালাম খাঁর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। গরু চুরি করতে আসা দলটি এমন কাণ্ড ঘটালেও এলাকায় ডাকাত পড়েছে—এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাওয়ার সময় তালা কাটার একটি যন্ত্র, প্লায়ার্স ও দেশি অস্ত্র রামদা ফেলে যায়। পরে আজ সোমবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ এগুলো উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
আহত ব্যক্তিরা হলেন সৈয়দভাকুরী গ্রামের আবদুস ছালামের ছেলে মো. জামাল খাঁ (৩২), তাঁর ভাই মো. জাহাঙ্গীর খাঁ (২৫) ও মো. কালাম খাঁ (৩৫)। আহত জামালকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জামালের অপর দুই ভাইকেও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও পরিবারটির সদস্যরা জানান, রোববার রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে আবদুস সালামের পুত্রবধূ রিনা খাতুন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে যান। এ সময় রিনা খাতুন দেখেন, গোয়ালঘরের সামনে তিন–চারজন টর্চলাইট জ্বালিয়ে কিছু একটা করছে। এ ছাড়া বাড়ির সামনেই একটি ছোট পিকআপ দাঁড়ানো এবং সেখানে তিন–চারজন অপেক্ষমাণ। রিনা খাতুন চিৎকার দিয়ে ঘরের দিকে দৌড় দিলে তাঁকে ধাওয়া দেয় দুর্বৃত্তদের একজন।
এ সময় রিনা খাতুনের স্বামী মো. জামাল খাঁ ঘর থেকে বের হলে তাঁর সঙ্গে ওই দুর্বৃত্তের ধস্তাধস্তি হয় ও তাঁকে মাথায় কোপ দেয়। এ সময় জামালের ভাই মো. কালাম খাঁ ও মো. জাহাঙ্গীর খাঁ অপেক্ষমাণ দুর্বৃত্তদের ধাওয়া দিলে তাঁদের মধ্যেও ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর খাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। পাশাপাশি কালামকেও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। এদিকে তাঁদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন সজাগ হয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
আবদুস ছালাম বলেন, ‘বাড়িতে পাশাপাশি চারটি গোয়ালঘর। চারটি গোয়ালঘরে ১০টি গরু ছিল। মূলত গরুগুলো নিতেই এরা (দুর্বৃত্তরা) দল বেঁধে আসে। বাড়ির লোকজন টের পেয়ে যাওয়ায় গরু নিতে পারেনি। কিন্তু আমার দুই ছেলেকে কুপিয়ে জখম এবং আরেক ছেলেকে পিটিয়ে আহত করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাই।’
এ ঘটনার খবর পেয়ে আজ দুপুরে ঘটনাস্থলে যান ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ওবায়দুর রহমান। তিনি বলেন, পাকা সড়কের পাশে থাকা বাড়িটিতে মূলত গরু চুরির উদ্দেশ্যেই এসেছিল দুর্বৃত্তরা। ডাকাতির কোনো ঘটনা নয়। বাড়ির লোকজন টের পেয়ে চোরচক্রকে আটকানোর চেষ্টা করলে ধস্তাধস্তি হয় এবং চোরচক্র পালিয়ে যায়। এমন সময় বাড়ির লোকজন চোরচক্রদের ধরার চেষ্টা করলে হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে দুজনকে জখম করে চোরচক্র পালিয়ে যায়। তাদের শনাক্ত করতে পুলিশের কাজ চলছে। রাত্রীকালীন পুলিশের নজরদারিও বাড়ানো হবে।