ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বিএনপি

আট জেলায় ১৩১টি মামলায় আসামি প্রায় ৬ হাজার। অধিকাংশ নেতা-কর্মী এখন জামিনে মুক্ত। 

বিএনপি

রংপুর বিভাগে একের পর এক মামলায় নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার হওয়ায় বিএনপির দলীয় কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে আসে। ২৮ অক্টোবরের পরে হওয়া এসব মামলায় এরই মধ্যে বেশির ভাগ নেতা-কর্মী জামিন পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মামলায় হয়রানির শঙ্কা থাকলেও নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছেন নেতারা।

গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের পর রংপুর বিভাগের আট জেলায় বিভিন্ন ঘটনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে অন্তত ১৩১টি মামলা হয়। এই মামলার বিপরীতে নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা হিসেবে ছয় হাজারের অধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয় বলে জানিয়েছেন বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তাঁদের তথ্য অনুযায়ী এসব মামলায় ১ হাজার ২০০ জনের অধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হন। অধিকাংশ জামিনে মুক্ত হয়েছেন। গ্রেপ্তার এড়িয়ে অনেকে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। জামিন না পাওয়া অনেকে এখনো পলাতক।

বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলুও সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। দলের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিভাগের প্রতিটি জেলার নেতা-কর্মীরা জামিনে মুক্ত হচ্ছেন। তাঁরা কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে ফিরে আসছেন। দলের সাংগঠনিক ভিত্তি আবারও শক্তিশালী করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। 

আসাদুল হাবিব বলেন, ‘নেতা-কর্মীরা বাড়ি ছেড়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মনোবল দমে যায়নি। নতুন উদ্যমে তাঁরা দলের কাজে ফিরে এসেছেন।’

বিএনপি নেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রংপুর, দিনাজপুর ও গাইবান্ধা জেলায় সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে। গাইবান্ধায় ৩০টি মামলায় নামে-বেনামে ২ হাজার ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। দিনাজপুরে ৩৭ মামলায় ১ হাজার ২০০ ও রংপুরে ৩৮ মামলায় আসামি ৩২৫ জনকে আসামি করা হয়। 

এ ছাড়া লালমনিরহাটে ছয়টি মামলায় ২২৯ জন, পঞ্চগড়ে ৪ মামলায় ৮০ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৩ মামলায় ৯০০ জন, কুড়িগ্রামে ২ মামলায় ১১০ জন এবং নীলফামারীর সৈয়দপুরে একটি মামলায় ৬০০ জনকে আসামি করা হয়। আট জেলায় গ্রেপ্তার হন অন্তত ১ হাজার ১৫৪ জন। তাঁদের অধিকাংশই জামিন পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার নেতারা।

কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর অনেক নেতা-কর্মীর মধ্যে শঙ্কা ও ভয়ভীতি কাজ করছে। তাঁরা বলছেন, মামলার পেছনে ব্যয়ভার বহন করা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। তার ওপর পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মামলায় কারাগারে থাকায় সংসারে প্রভাব পড়েছে। 

রংপুর মহানগরের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মকসুদার রহমান (৬৫)। তিনি পেশায় বাবুর্চি। তিনি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি জামিন পাওয়ার পর প্রথম আলোকে তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকায় ব্যবসার অবস্থা খারাপ হয়েছে। তবে দলের লোকজন বাড়িতে খোঁজখবর নিয়েছেন। দুই ছেলেকে নিয়ে নতুন করে শুরুর চেষ্টা করছেন।

রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামানও সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন। তবে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মাহফুজ উন নবী এখনো কারাগারে। সামসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, জেল থেকে মুক্ত হয়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রায় দিনই আদালতে মামলার কাজে বেশি সময় যাচ্ছে। নেতা-কর্মীদের জামিন ও তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হচ্ছে। এখন দল গোছানোর কাজে নেমে পড়েছেন।

লালমনিরহাটে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মামলার তদারকির দায়িত্বে থাকা আইনজীবী মহিউদ্দিন আহমেদ ও কে এম হুমায়ুন রেজা বলেন, এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে যাঁরা আটক হয়েছিলেন, তাঁরা সবাই জামিনে আছেন। 

গাইবান্ধা বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবরের পরে জেলার অন্তত ৫০০ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে ১০ জনের মতো কারাগারে আছেন। তবে জেলার শীর্ষ নেতাদের কেউ আর কারাগারে নেই। দিনাজপুরে ৩৭ মামলায় ৪৫০ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হন। এখনো জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেনসহ ৩৫ জনের মতো কারাগারে আছেন। তিনি ঢাকায় হওয়া নাশকতার একটি মামলার আসামি। এই মামলায় তাঁকে দিনাজপুর থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 

দিনাজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ‘দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ত্যাগ স্বীকার করেছেন। অনেক বাধাবিপত্তির পরেও আমরা টিকে আছি, টিকে থাকব।’

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধিরা]