‘পানিসংকট দূর হয়নি, একটি গোষ্ঠীর পকেট ভারী হয়েছে’

বিশ্ব পানি সপ্তাহ উপলক্ষে বরিশালে আয়োজিত সমাবেশ ও শোভাযাত্রা। আজ দুপুরে নগরের অশ্বিনী কুমার হল এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

বিশ্ব পানি সপ্তাহ উপলক্ষে বরিশালে শোভাযাত্রা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগরের অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে বক্তারা জানান, উপকূলীয় জেলাগুলোয় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানিতে লবণাক্ততা বেড়েই চলছে। এতে কৃষি, জনস্বাস্থ্য ও জীবন-জীবিকাসহ নানা খাত হুমকিতে পড়ছে। এখনই কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ জানান তাঁরা।

আজ বরিশালে এসব কর্মসূচির আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা প্রান্তজন ও পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (প্রাণ)। এতে সহযোগিতা করেছে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। শোভাযাত্রা ও সমাবেশে স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, বেসরকারি উন্নয়ন কর্মী, নারী সংগঠনের সদস্য, কৃষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন। এ সময় তাঁরা ‘পানি নেই, জীবন নেই’, ‘উপকূল বাঁচাতে পানি বাঁচান’ ও ‘ভূগর্ভস্থ পানি রক্ষা করুন’সহ বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

সমাবেশে পরিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম বরিশালের আহ্বায়ক  সুভাষ দাস বলেন, ‘পানির সংকট মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ দরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো লোকদেখানো ছাড়া কিছুই নয়। এতে সংকট দূর হয়নি; বরং একটি গোষ্ঠীর পকেট ভারী হয়েছে। আমরা চাই, জলবায়ুসংকট মোকাবিলায় দুর্নীতি বন্ধ করে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হোক। এ জন্য জলাধার, খাল খনন ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে কার্যকর প্রকল্প হাতে নিতে হবে। একই সঙ্গে জনগণকেও পরিবার ও মহল্লা পর্যায়ে পানি সাশ্রয়ে উদ্যোগী হতে সচেতনতা বাড়াতে হবে।’

গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে বরিশাল পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোতেই শুধু নয়, বরিশাল নগরেও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর গড়ে ১ দশমিক ৫ থেকে ২ মিটার কমছে। এভাবে চলতে থাকলে ১০ বছরের মধ্যে নিরাপদ পানির জন্য হাহাকার করবে মানুষ। গবেষণায় দেখা গেছে, বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোয় প্রায় ৪৫ শতাংশ এলাকা লবণাক্ত পানির ঝুঁকিতে আছে। এটি কৃষি, মৎস্যচাষ, এমনকি নারীর স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মো. মান্না নামের স্থানীয় এক কৃষক বলেন, আগে ফসল ফলত প্রচুর, এখন লবণাক্ততায় জমি নষ্ট হচ্ছে। পানির অভাবে সেচ দেওয়া যায় না। এতে এখন টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা না পেলে এ অঞ্চলের কষি খাতকে বিপর্যয়ের কবল থেকে কোনোভাবেই রক্ষা করা যাবে না।