বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বাক্স ভেঙে দরপত্র লুটে নেওয়ার অভিযোগ

বাংলাদেশ বেতারের উচ্চ শক্তি প্রেরণ কেন্দ্র-১–এর দরপত্র বাক্সের তালা ভাঙচুরসহ বাক্সে জমা হওয়া দরপত্র লুট করা হয়। আজ রোববার ঢাকার সাভারেছবি: সংগৃহীত

ঢাকার সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ বেতারের উচ্চ শক্তি প্রেরণ কেন্দ্র-১–এর দরপত্র বাক্স ভাঙচুরসহ বাক্সে জমা হওয়া দরপত্র লুটের ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বিএনপির নেতা–কর্মীদের একটি অংশ এ ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ বেতারের উচ্চ শক্তি প্রেরণ কেন্দ্র-১–এর কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানা–পুলিশ জানায়, সম্প্রতি সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ বেতারের উচ্চ শক্তি প্রেরণ কেন্দ্র-১–এর ৪টি স্টোরে সংরক্ষিত যন্ত্রপাতির অকেজো বা অব্যবহৃত পুরোনো মালামাল নিলামে বিক্রির জন্য প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোটেশন বা দরপত্র আহ্বান করা হয়। রোববার ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুসারে সকাল থেকে দরপত্র ক্রয়কারীরা দরপত্র বাক্সে তাঁদের দরপত্র জমা দেওয়া শুরু করেন। সকাল ১০টার দিকে ৩০–৪০ জনের একটি দল প্রতিষ্ঠানটির আবাসিক প্রকৌশলী মো. মঈনউল হকের কক্ষে প্রবেশ করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

একপর্যায়ে তাঁরা ‍ওই কক্ষে টাঙানো শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ভেঙে ফেলেন এবং দরপত্র শিডিউল বাতিল করতে হবে বলে মঈনউলকে জানিয়ে দেন। এরপর তাঁরা কাঠের দরপত্র বাক্স ভেঙে বাক্সে থাকা দরপত্র লুট করেন।

প্রতিষ্ঠানটির আবাসিক প্রকৌশলী মো. মঈনউল হক বলেন, ‘সকাল ১০টার কিছু সময় পর একসঙ্গে ৩০-৪০ একটি দল আসে। তাঁরা শিডিউল জমা দেননি। কিন্তু আমার কক্ষে এসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তাঁরা কক্ষে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ফেলেন। শিডিউল বাতিল করে দিতে বলেন। এরপর দরপত্র বাক্স নিয়ে সেটি ভেঙে ফেলে শিডিউল নিয়ে যান। আমার জানা মতে, বাক্সে ৫-৬টি শিডিউল ছিল।’

এ ঘটনায় মামলা করবেন কি না, প্রশ্ন করা হলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি মো. মঈনউল হক।

ঘটনার সময় প্রতিষ্ঠানটিতে দায়িত্বরত সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির ফটকে চারজন কনস্টেবল নিয়ে দায়িত্ব পালন করছিলাম। এরপর বেতার কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসারে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তারক্ষীদের সহায়তায় স্লিপ (মানি রিসিপট) দেখে শিডিউল জমা দেওয়ার জন্য ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিই।’

মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টার একটু পর মো. মঈনউল হক কল করে তাঁর অফিসে যেতে বলেন। পরে অফিসে গিয়ে দেখি দরপত্র বাক্স ভাঙা, কিছু কাচ ভাঙা। একজন একজন করে ঢোকার পর ওই সময় ভেতরে ২০-৩০ জন হইছিল। কী হইছিলে স্যার (মঈনউল হক) ভালো বলতে পারবেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনার সময় সাভার থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলমের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
তবে বিএনপি নেতা খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমার কোনো নেতা-কর্মী সেখানে যাননি। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, যাঁরা শিডিউল কিনেছিলেন, তাঁরা ঝামেলা করেছেন। শিডিউল কারা কিনেছেন, সেটি দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।’

বিএনপির নেতা গোলাম মোস্তফার আত্মীয় মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দরপত্র প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যে মালামাল দেওয়ার কথা, সেগুলো সরিয়ে ফেলার কারণে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। পরে পোলাপান দরপত্র বাতিল করার জন্য বলেন এবং দরপত্র বাক্স ভেঙে ফেলেন। অফিসারের (মঈনউল হক) কক্ষে টাঙানো শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় সেটি নামিয়ে ফেলা হয়। আমরা বাইরে ছিলাম। অনেকে আশা করে শিডিউল জমা দিয়েছিল; কিন্তু আগেই মালামাল সরিয়ে ফেলার কারণে উত্তেজনা তৈরি হয়। এরপরও আমরা বিষয়টি নিয়ে দুঃখিত।’

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুয়েল মিয়া বলেন, এ ঘটনায় বাংলাদেশ বেতারের উচ্চ শক্তি প্রেরণ কেন্দ্র-১–এর পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।