অবৈধ ইজিবাইকে নওগাঁ শহরে যানজট

ইজিবাইক বেশি চলাচল করায় নওগাঁয় তীব্র যানজট হচ্ছে। সম্প্রতি নওগাঁ শহরের ব্রিজের মোড় এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

নওগাঁ শহরে চলাচলকারী অধিকাংশ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের নিবন্ধন নেই। ছোট জেলা শহরে নিবন্ধিত ইজিবাইকের সংখ্যা ৪ হাজারের মতো। এর বাইরে অন্তত ৭ হাজার নিবন্ধনহীন ইজিবাইক সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এগুলো বিশৃঙ্খলভাবে চলাচল করায় শহরের প্রায় সব সড়ক ইজিবাইকের দখলে চলে গেছে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে থাকতে থাকতে অতিষ্ঠ শহরবাসী।

শহরবাসীর ভাষ্য, তিন চাকার যানবাহনের কারণে শহরের সব সড়ক অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। দুর্ঘটনার আতঙ্ক নিয়ে পথচারীদের চলাফেরা করতে হচ্ছে। সড়কে তিন চাকার যানের দাপট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেই। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, তিন চাকার যান কমাতে আট বছর ধরে পৌরসভা থেকে কোনো নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু আশপাশের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নিবন্ধন নেওয়া ইজিবাইক শহরে ঢুকে পড়ছে। জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া অবৈধ যান নিয়ন্ত্রণ করা পৌরসভার একার পক্ষে সম্ভব নয়।

সড়ক চার লেন করতে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। সড়কটি চার লেন হলে যানজট সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
রাশেদুল হক, নির্বাহী প্রকৌশলী, সওজ, নওগাঁ কার্যালয়

নওগাঁ পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ৩৮ দশমিক ৪২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের শহরে ২০১০ সাল থেকে ইজিবাইকের নিবন্ধন দিতে শুরু করে পৌর কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৮৭টি তিন চাকার যানকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের পর থেকে পৌর কর্তৃপক্ষ ইজিবাইকের নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ রেখেছে। সূত্র জানায়, বৈধ ইজিবাইকের সংখ্যা কম হলেও প্রকৃতপক্ষে শহরে প্রতিদিন ১১ হাজারের বেশি ইজিবাইক চলাচল করছে। বৈধ-অবৈধ ইজিবাইক ছাড়াও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ আরও কয়েক হাজার গাড়ি চলাচল করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহরের প্রধান সড়কের দুই পাশে তাজের মোড়, বাটার মোড়, ব্রিজের মোড়, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, মুক্তির মোড়, রুবির মোড় ও দয়ালের মোড় এলাকায় বড় বড় বিপণিবিতান, ব্যাংক-বিমাসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বাজার এলাকার ভেতর দিয়ে গেছে শহরের প্রধান সড়ক। সড়কটির কোথাও ১৬ ফুট, আবার কোথাও ৮ ফুট চওড়া। সড়ক দিয়ে অটোরিকশা, ভ্যান, ইজিবাইকসহ ব্যক্তিগত যান চলাচল করছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে কিছুদূর পরপর ইজিবাইক ও অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় তৈরি হচ্ছে যানজটের। এ ছাড়া শহরের পুরাতন বাসস্টান্ড-গোশতহাটির মোড় সড়ক, ব্রিজের মোড়-ডিগ্রির মোড় সড়কেও তীব্র যানজট লেগে থাকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল আটটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত বাজার এলাকায় কিছুদূর পরপর যানজট লেগে থাকে। সড়কে চলা যানবাহনের ৭০ থেকে ৮০ ভাগই ইজিবাইক। আগে যেতে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লেগে থাকে ইজিবাইকগুলো। অনেক ইজিবাইক এক থেকে দুজনের বেশি যাত্রী পাচ্ছে না। অথচ একটি ইজিবাইকে আটজন যাত্রী বসতে পারেন। শহরের তাজের মোড় থেকে মুক্তির মোড় পর্যন্ত প্রধান সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় কিছুদূর পরপর ইজিবাইক ও অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। সড়কের ওপর এসব অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে পুরো সড়কই অবরুদ্ধ হয়ে থাকছে।

ব্রিজের মোড় এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী নাসির আহমেদ বলেন, ইজিবাইক ও অটোরিকশাগুলো যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সড়কের মোড়গুলোতে গোলচত্বর বা ইউটার্ন না থাকায় যেখানে-সেখানে ইজিবাইক ইচ্ছেমতো ঘোরানো হচ্ছে। সংকেত ছাড়াই হঠাৎ করে গাড়ি ঘোরানোয় মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ির সঙ্গে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে। ইজিবাইকচালকদের নিয়ন্ত্রণহীন চলাফেরা নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে মারামারির ঘটনাও ঘটে।

ইজিবাইকচালকদের দাবি, শহরের ভেতরে বৈধ স্ট্যান্ড বা ফাঁকা জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে তাঁদের রাস্তার ওপরেই ইজিবাইক দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। ইজিবাইকচালক মিজানুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম বলেন, পৌরসভা থেকে যে পরিমাণ ইজিবাইকের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে, তার দ্বিগুণ ইজিবাইক অবৈধভাবে চলছে। অবৈধ ইজিবাইকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিলে গাড়ির সংখ্যা কমে যাবে। তখন যানজটও কমে আসবে।

নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নজমুল হক বলেন, শহরের ভেতর যাওয়া প্রধান সড়কটি খুব সরু। সড়কটি প্রশস্ত না হলে বা শহরের তাজের মোড় থেকে মুক্তির মোড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় ফ্লাইওভার না হওয়া পর্যন্ত যানজটের সমস্যার সমাধান হবে না। শহরে যানবাহনের চাপ কমানোর জন্য ২০১৬ সাল থেকে শহরে ইজিবাইকের নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ রয়েছে। জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা পৌরসভার একার পক্ষে সম্ভব নয়।