তানোরের সেই ‘শতবর্ষী’ তেঁতুলগাছ কাটা নিয়ে ভিন্ন সুর

দুটি ডাল বাকি থাকতে তেঁতুলগাছটি কাটা বন্ধ করা হয়। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজশাহীর তানোর উপজেলার অমৃতপুর গ্রামেছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর তানোরের অমৃতপুরে ‘শতবর্ষী’ সেই তেঁতুলগাছ কাটা নিয়ে এখন ভিন্ন কথা বলছেন আবেদনকারী। তাঁর দাবি, ঝুঁকিপূর্ণ একটি রেইনট্রিগাছ কাটার আবেদন করেছিলেন তিনি। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাছটির সঙ্গে আরও দুটি তেঁতুলগাছ যুক্ত করে ভূমি অফিসে বলে দেন। এরপর তাঁকে দিয়ে সই করিয়ে নেওয়া হয়।

এদিকে আজ শনিবার সরেজমিনে গাছগুলো দেখে এসে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবিদা সিফাত বলছেন, তেঁতুলগাছ দুটির যেটুকু বাকি আছে, সেটুকু তাজা। এখন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিলে ক্রেতার টাকা ফেরত দিয়ে গাছ দুটি যে অবস্থায় আছে, সেভাবে রাখা যেতে পারে।

আরও পড়ুন

যদিও গতকাল শুক্রবার গাছ কাটার সময় তিনি বলেছিলেন, একটি তেঁতুলগাছে আগুন লাগার পর অমৃতপুরের তেঁতুলগাছটির কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যেতে পারেনি। এ জন্য জনস্বার্থে গাছটি কাটতে এলাকাবাসী আবেদন করেছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আজিজপুরের গাছটিতে আগুন লেগেছিল সত্যি। কিন্তু আজিজপুর পার হয়ে অমৃতপুর যেতে হয়। তাই অমৃতপুরের গাছের কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি বাধা পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাছ কাটার আবেদন করেছিলেন উপজেলার পিঁপড়াকান্না গ্রামের সোহেল রানা। তিনি বলেন, কলমা ইউনিয়নের দরগাডাঙ্গা বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ একটি রেইনট্রিগাছ কাটার জন্য তিনি আবেদন করেছিলেন। গাছটি তাঁর মার্কেটের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। একইভাবে রাস্তার ওপর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। সেটা এক বছর আগের ঘটনা। তৎকালীন ইউএনও পঙ্কজ দেবনাথ গাছটির সঙ্গে তেঁতুলগাছ দুটি যোগ করে ভূমি অফিসে ফোন করে বলে দিয়েছিলেন।

ওই আবেদন প্রতিস্বাক্ষর করেছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য নজিম উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সোহেল রানা একটি গাছ কাটার আবেদন করেছিলেন। ইউএনওর নির্দেশে ভূমি অফিসের লোকজন তেঁতুলগাছ দুটি যোগ করে তাঁদের সই নেন। তেঁতুলগাছ দুটিতে ভূত আছে ভেবে কে বা কারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সে জন্য ইউএনও গাছ দুটি যোগ করে ভূমি অফিসে বলে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, তিনি ৮ নম্বর দরগাডাঙ্গা ওয়ার্ডের সদস্য। তেঁতুলগাছ দুটি ৯ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। অন্য ওয়ার্ডের গাছ কাটার সুপারিশ তিনি করতে পারেন না। তাঁর এখতিয়ারও নেই। ইউএনও নির্দেশ দিয়ে এ কাজ করিয়ে নিয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে তৎকালীন ইউএনও পঙ্কজ দেবনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তিনি পদোন্নতি পেয়ে অন্য জায়গায় বদলি হয়ে গেছেন। তবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবিদা সিফাত আজ প্রথম আলোকে বলেন, তখন তিনি দায়িত্বে ছিলেন না। তখনকার কথা বলতে পারবেন না। আবেদনে তিনটি গাছ কাটার কথা উল্লেখ আছে। তিনি বলেন, আবেদন পাওয়ার পর স্থানীয় ভূমি অফিস গাছগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বলে প্রতিবেদন দিয়েছিল। তারা ঝুঁকিপূর্ণ বলে বন বিভাগে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছিল। বন বিভাগ গাছগুলো মরা বলে উল্লেখ করেছিল। এ জন্য নিলাম করার সময় তারা ‘মরা গাছ’ উল্লেখ করে।

আবিদা সিফাত বলেন, শনিবার তিনি এলাকায় গিয়ে দেখেছেন। তেঁতুলগাছ দুটিতে আগুন দেওয়ার চিহ্ন আছে। কিছু অংশ কয়লা হয়ে আছে। মরা ডালগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। দুটি গাছেরই বাকি অংশে তাজা পাতা আছে। তার মানে, এই অংশকে তাজাই বলতে হবে। তিনি বলেন, ‘এখন স্যাররা (জেলা প্রশাসক) যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই হবে। চাইলে নিলামে যিনি কিনেছেন, তাঁর টাকা ফেরত দিয়ে গাছগুলো রাখা যেতে পারে। কারণ, এখনো টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি।’

উপজেলার কলমা ইউনিয়নের অমৃতপুর ও আজিজপুরের দুটি তেঁতুলগাছ এবং দরগাডাঙ্গা বাজারের একটি রেইনট্রিগাছ মরা হিসেবে মোট ৪৪ হাজার ৮৭৫ নিলামে বিক্রি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার অমৃতপুরের তেঁতুলগাছটি কাটার সময় ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি তৎক্ষণাৎ গাছ কাটা বন্ধের নির্দেশ দেন এবং ঘটনাস্থল থেকে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারকে ফোন করে তাজা গাছ কাটা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ করেন।

ওমর ফারুক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গাছ কাটার পেছনে একটি চক্র আছে। তারাই তাজা গাছকে মরা বলে নিলামে তুলেছে। যিনি গাছগুলো নিলামে কিনেছেন, তাঁর কাজ এসব কাঠ কিনে বেড়ানো। তিনি বলেন, তেঁতুলগাছ বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহ্য। একটি গাছের দামই এক থেকে দেড় লাখ টাকা হবে। অথচ নামমাত্র মূল্যে গাছগুলো নিলামে বিক্রি করা হয়েছে।