শৌচাগারে উদ্ধার নবজাতকের মা-বাবাকে পাচ্ছে না পুলিশ, দত্তক নিতে অনেকের আবেদন

নবজাতক

মাদারীপুরে শৌচাগারের ভেতর থেকে উদ্ধার হওয়ার নবজাতকের ঠিকানা এখন হাসপাতাল। পুলিশের পাহারায় হাসপাতালের নার্সরা নবজাতকটিকে সুস্থ করে তুলছেন। শিশুটির মা–বাবাকে খুঁজছে পুলিশ। এদিকে নবজাতক শিশুটিকে দত্তক নিতে অন্তত ২০ নিঃসন্তান দম্পতি উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা কার্যালয়ে আবেদন করেছে।

গত মঙ্গলবার বিকেলে মাদারীপুর শহরের বেসরকারি হাসপাতাল চৌধুরী ক্লিনিকের শৌচাগারের ভেতর থেকে এক নবজাতককে উদ্ধার করেন হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী সাথী বেগম। পরে শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের নবজাতকের বিশেষায়িত সেবাকেন্দ্রে রাখা হয়।

হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক মনিরুজ্জামান আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুটি আগের থেকে ভালো আছে। তারপরও আমরা শিশুটিকে নিবিড় পরিচর্যার মধ্যেই রেখেছি। শিশুটিকে ফিডিং দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। একজন নবজাতকের মাকে পেলে ভালোর দিকে যাবে বলা যায়। তবে এ মুহূর্তে শিশুটিকে শঙ্কামুক্ত বলার সুযোগ নেই। কারণ, শিশুটিকে এখনো ফিডিং শুরু করা যায়নি।’

বর্তমানে সমাজসেবা কার্যালয় ও উপজেলা প্রশাসন শিশুটির দেখভালের দায়িত্ব পালন করছে। জানতে চাইলে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক বিশ্বজিৎ বৈদ্য প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে ২০টির বেশি পরিবার শিশুটিকে দত্তক নিতে আবেদন করেছে। আজ সদর উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডে এক সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে শিশুটির বিষয়ে দুটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে। প্রথমত শিশুটিকে ফরিদপুরে শিশু নিবাসে রেখে যত্ন করা। দ্বিতীয়ত বিকল্প পরিচর্যায় যেকোনো পরিবারের কাছে দত্তক দেওয়া।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত জেলা প্রবেশন (সংশোধনকারী) কর্মকর্তা শেখ নাহিয়ান ওয়াহিদ বলেন, ‘শিশুটি কোথায় যাবে, তার নিরাপত্তা, চিকিৎসাসহ সব ধরনের কাজ যেন সঠিক পন্থায় হয়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। তবে শিশুটির ভবিষ্যৎ উপজেলা প্রশাসন অথবা আদালতের ওপর নির্ভর করছে। আশা করছি, এক সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

শৌচাগারের ভেতর থেকে শিশু উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে মাদারীপুরে বেশ আলোচনা চলছে। অনেকেই শিশুটির মা-বাবাকে দায়ী করে সমালোচনা করছেন। আবার নবজাতকটি কন্যাশিশু হওয়ায় নারীনেত্রীরা শিশুর মা-বাবাকে খুঁজে বের করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য আঞ্জুমান জুলিয়া প্রথম আলোকে বলেন, নারীরা এখনো যে অবহেলিত, তার প্রমাণ সমাজে দৃশ্যমান। নবজাতকটি পুত্রসন্তান হলে দৃশ্যটা হয়তো ভিন্ন হতো। যেহেতু নবজাতকটি কন্যাসন্তান, তাই ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই ঠাঁই হয়েছে শৌচাগারে। প্রশাসনের কাছে দাবি, শিশুটির মা-বাবাকে খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে নবজাতকটির মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

নবজাতক শিশুটির মা-বাবার পরিচয় খুঁজতে পুলিশের তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ। তবে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অনুসন্ধান) জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ওই নবজাতকের মা-বাবাকে এখনো খুঁজে বের করতে পারিনি। ওই ক্লিনিকের শৌচাগারটি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতার মধ্যে ছিল না। আমরা কোনো ফুটেজ পাচ্ছি না। তবে আশপাশের ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে।’