সুদানে ড্রোন হামলায় নিহত শান্তিরক্ষী সবুজকে গাইবান্ধায় গ্রামের বাড়িতে দাফন

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় নিহত সবুজ মিয়ার লাশ আজ রোববার দুপুরে গাইবান্ধায় পৌঁছায়। সেখানে সেনাবাহিনী তাঁকে গার্ড অব অনার দেয়। এরপর জানাজার নামাজ শেষে তাঁকে দাফন করা হয়। বিকেল তিনটার দিকে নিহত সবুজের গ্রামের বাড়িতেছবি: প্রথম আলো

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়ার লাশ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।
সুদানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়ার লাশ গাইবান্ধায় পৌঁছেছে।

এর আগে সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে আজ রোববার বেলা দুইটার দিকে তাঁর লাশ গাইবান্ধা সদর উপজেলার তুলশীঘাট হেলিপ্যাডে নামানো হয়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ পলাশবাড়ী উপজেলার মহদিপুর ইউনিয়নের ছোট ভগবানপুর গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। এরপর বাড়ি–সংলগ্ন ফাঁকা মাঠে জানাজা শেষে সবুজ মিয়াকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

জানাজার পর এক মিনিট নীরবতা পালন ও গার্ড অব অনার প্রদান করে সেনাবাহিনী। পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরোয়ারে আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, বেলা তিনটার দিকে সবুজ মিয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

এর আগে সুদান থেকে গত শনিবার ঢাকায় লাশ পৌঁছানোর পর যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও সামরিক আনুষ্ঠানিকতার পর নিহত অন্য পাঁচ শান্তিরক্ষীর সঙ্গে ঢাকা সেনানিবাসে তাঁর জানাজা হয়।

গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ছোট গ্রাম ভগবানপুর। সেখানে সবুজের লাশ পৌঁছানোর পর গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। সবুজের লাশ একনজর দেখার জন্য আশপাশের এলাকার মানুষ তাঁর বাড়িতে ভিড় জমান।

সবুজ মিয়ার স্বজনদের আহাজারি
ছবি: প্রথম আলো

সবুজের লাশ বাড়িতে পৌঁছানোর পর স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। তাঁর স্ত্রী নুপুর আক্তার (২২) স্বামীর লাশ দেখে বলছিলেন, ‘দেড় মাস আগে সবুজ বাড়িতে এসেছিল। যাওয়ার সময় হাসিমুখে বিদায় নেয়, আর বলে, “এবার বাড়িতে ফিরে ঘরবাড়ি ঠিক করব।” সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। হাসিমুখে বিদায় নেওয়া স্বামী ফিরল লাশ হয়ে।’

এ সময় নুপুর আক্তারের সঙ্গে সবুজের মা ছকিনা বেগমও (৬৮) আহাজারি করছিলেন। বলছিলেন, ‘হামার একন্যা ব্যাটা বিদেশোত গ্যাচিলো চাকরির জন্নে। বিদেশোত যায়া তার কী হলো, কেটা তাক মারি ফেলালো। তোমরা হামার ব্যাটাক আনি দেও বাবা।’

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সবুজ মিয়া এক ভাই, এক বোনের মধ্যে ছোট। একমাত্র বোন আরফিন বেগমের বিয়ে হয়েছে। সবুজ ২০১০ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। দেড় বছর আগে বিয়ে করেন। তাঁদের কোনো সন্তান নেই।

গত ৭ নভেম্বর সবুজ মিয়া সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে যান। ১৪ ডিসেম্বর সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় মিশনে দায়িত্বরত ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন। আহত হন আটজন শান্তিরক্ষী।

সবুজ মিয়ার চাচা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় দেড় মাস আগে সবুজ বাড়িতে এসেছিল। সে বিদেশে যাওয়ার আগে বলেছিল, সুদানে শান্তি রক্ষা মিশনে গেলে অনেক টাকা ভাতা পাবে। সেই টাকা দিয়ে বাড়িতে অসমাপ্ত ঘর ঠিকঠাক করবে। বাড়ির জায়গায় বাড়ি থাকল, সে ফিরল লাশ হয়ে।’