ইয়াবাসহ আটক পুলিশ সদস্যকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ আদালতের

চট্টগ্রাম আদালত ভবনফাইল ছবি

চট্টগ্রাম নগরে কক্সবাজার থেকে আসা এক পুলিশ সদস্যকে ইয়াবাসহ আটকের পর ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের নাম ইমতিয়াজ হোসেন। তিনি কক্সবাজার জেলা আদালতের এক বিচারকের গানম্যান হিসেবে কর্মরত। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ নির্দেশ দেন।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বিচারক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেন। এ ঘটনার তদন্তের জন্য নগর পুলিশের উপকমিশনারকে (দক্ষিণ) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের ১২ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।

আদালত সূত্র জানায়, আদেশে বিচারক উল্লেখ করেন, ৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সোয়া দুইটার দিকে নগরের শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রিজ) এলাকায় বাকলিয়া থানার অংশে ঢাকাগামী একটি বাসে কোনো কোনো পুলিশ সদস্য তল্লাশি চালিয়েছিলেন, তাঁদের ডিউটি রেজিস্ট্রারের জিডি ও সিসি কপি সংগ্রহ করতে হবে। ঘটনার সময়ের সিসি ফুটেজ সংগ্রহ, পুলিশ পরিচয়দানকারী ইমতিয়াজ আহমেদকে আটক কিংবা বাসে তল্লাশি চালানো হয়েছিল কি না, তাঁর কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধারের ঘটনা সঠিক কি না, যে বাসে তল্লাশি চালানো হয়, সেই বাসের চালক, সুপারভাইজারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম–ঠিকানা সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ, ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা, মামলা না করার এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়ার কারণ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

৮ ডিসেম্বর রাতে নগরের প্রবেশমুখ বাকলিয়া থানার নতুন ব্রিজ এলাকায় চেকপোস্টে কক্সবাজার থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশির সময় ১ লাখ ২০ হাজার ইয়াবা বড়িসহ পুলিশ সদস্য ইমতিয়াজ হোসেনকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য ইমতিয়াজ হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। এ ছাড়া খুদে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া দেননি তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, পরিচয় জানার পর দর–কষাকষির মাধ্যমে বাকলিয়া থানার ওসি আফতাব উদ্দিন ও পরিদর্শক (তদন্ত) তানভীর আহমেদ ইয়াবাগুলো জব্দ না করে ইমতিয়াজ হোসেনকে ছেড়ে দেন। ওই সময় ঘটনাস্থলে বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল আমিন, দায়িত্বরত এএসআই সাদ্দামসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। উদ্ধার হওয়া ইয়াবার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য বাকলিয়া থানার ওসি আফতাব উদ্দিন ও পরিদর্শক (তদন্ত) তানভীর আহমেদের মুঠোফোনে কল করা হয়, রিং হলেও তাঁরা কল ধরেননি।

কক্সবাজার পুলিশ লাইনসের আরআই ইন্সপেক্টর আশরাফ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ইমতিয়াজ হোসেন ২০২২ সালের ১৩ জুলাই কক্সবাজার পুলিশ লাইনসে যোগ দেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির গানম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৯ থেকে ২৭ নভেম্বর র‌্যাব–১৫ কক্সবাজার অঞ্চলের চার শতাধিক কর্মকর্তা–কর্মচারীকে বদলি করে র‌্যাব সদর দপ্তর। এ ছাড়া কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল ইসলামকে ঢাকার র‌্যাব সদর দপ্তরে বদলি করা হয়েছে। ইয়াবাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁদের বদলি করা হয়েছে বলে র‌্যাব সূত্র জানিয়েছে।