নৌকার পক্ষে না থাকায় ঈগল প্রতীকের কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা: স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম। শনিবার সন্ধ্যায় কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে না থাকায় এবং ঈগল প্রতীকের পক্ষে মিছিলে অংশ নেওয়ায় এসকেন্দার খাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মাদারীপুর-৩ (কালকিনি-ডাসার-সদর একাংশ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম। শনিবার সন্ধ্যায় কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ অভিযোগ করেন।

তাহমিনা বেগম কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য। লিখিত বক্তব্যে তাহমিনা বেগম বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী ও তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং আমার কর্মীদের বিভিন্নভাবে হুমকি, হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের এজেন্ট লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক ব্যাপারীর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আমার কর্মী এসকেন্দার খাঁকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন।’

তাহমিনা বেগম বলেন, ‘আমার নির্বাচন করায় আমার কর্মীকে খুন করা হলো। আমি শোকাহত ওই পরিবারকে কী জবাব দেব? নির্বাচনে কেন এই সহিংসতা হবে? এই দায় নৌকার প্রার্থী এড়াতে পারেন না। তাঁর কারণেই এসকেন্দার খুন হলো। এর কঠিন বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি বলেন ‘এসকেন্দার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য। আমার নির্বাচন করে। আমার মিটিং-মিছিলে নেতৃত্ব দেয়। আর পুলিশ বলছে, “জমিজমা বিরোধে তাকে তার বংশের লোকজন হত্যা করেছে।” নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সাফাই গাইতে পুলিশ এমন কথা বলে দায় এড়াচ্ছে।’

আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমালোচনা করে তাহমিনা বেগম আরও বলেন, নৌকার কর্মী-সমর্থকেরা প্রথম থেকেই সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ভোটারদের মধ্যে ভীতসন্ত্রস্ত পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করে যাচ্ছেন। নৌকার মিছিল থেকে ঘোষণা করা হয়, যদি কেউ নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করেন, তাহলে তাঁদের ওপর হামলা করা হবে এবং এলাকায় থাকতে পারবেন না। দুই হাজার লগি-বইঠা তৈরি করা হয়েছে, নৌকার বিরোধীদের এলাকা ছাড়া করার জন্য। তাঁদের এ ধরনের বক্তব্যে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

পুলিশকে নৌকার কর্মী উল্লেখ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম বলেন, ‘গত তিন দিনে আমাদের মিছিলে বোমা হামলা, নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। পুলিশ নিরপরাধ দুজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে তাদের দায় এড়িয়ে গেছে। মূল আসামিরা চিহ্নিত হলেও পুলিশ তাদের ধরছে না। আমরা কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা এখনো নেওয়া হয়নি। ওসি নৌকার হয়ে কাজ করছেন।’

তাহমিনা বেগম বলেন, ‘গোলাপ সাধারণ ভোটারদের কাছে ঘোষণা দিচ্ছেন, এক ভোট পেলেও আমরা ঘোষণা দিয়ে এমপি হব এবং বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোট পিটিয়ে নেওয়া হবে, যা মাদারীপুর-৩ আসনের ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমি মাদারীপুর-৩ আসনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রশাসনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের এসব অভিযোগের বিষয়ে নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, ‘এসকেন্দার খাঁ হত্যার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে শুনেছি, চাচা-ভাতিজাদের মধ্যে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে এক ব্যক্তিকে কোপানো হয়েছে। সেই দায় আমার ওপরে চাপানো হচ্ছে। আমার প্রতিপক্ষ বিদ্রোহী প্রার্থী যে অভিযোগ দিচ্ছেন, তা সত্য নয়। ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে তিনি (তাহমিনা) নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছেন।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ভোরে বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটতে বের হন এসকেন্দারসহ বেশ কয়েকজন। এ সময় নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের কর্মী ও লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক ব্যাপারীর সমর্থকেরা তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালান। তাঁরা এসকেন্দারকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেন। পায়ের রগও কাটা হয়। বাধা দিলে আরেকজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে তাঁদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে পালিয়ে যান হামলাকারীরা। আহত দুজনকে উদ্ধার করে প্রথমে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের পাঠানো হয় বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে দুপুর ১২টার দিকে এসকেন্দার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।