রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তার আবাসনের বেশির ভাগ বাসা-কোয়ার্টার খালি পড়ে আছে। বর্তমানে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আবাসনের ৫৭ শতাংশ বাসা কেউ ব্যবহার করছেন না। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী অতিরিক্ত ভাড়া, নিরাপত্তাহীনতা, কক্ষস্বল্পতা এবং অল্প টাকায় বাইরে বেশি সুবিধা পাওয়ায় শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত কোয়ার্টার ছেড়ে বাইরে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।
শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারগুলো সেকেলে। কিন্তু ভাড়া অনেক বেশি। একই ভাড়ায় বাইরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, সুযোগ-সুবিধাসহ ভালো বাসা পাওয়ায় তাঁরা সেদিকে ঝুঁকছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষক সমিতি ও কর্মকর্তারা অসুবিধাগুলো মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে ইতিবাচক জবাব পাওয়া যায়নি। আর নিরাপত্তার বিষয়টি তাঁরা নজরদারি করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট বাসা বা কোয়ার্টার আছে ৩১৪টি। এর মধ্যে ১২৫টি বাসা খালি পড়ে আছে। সহায়ক, সাধারণ ও সুইপারদের ১৫০টি বাসার মধ্যে ৫৭টি খালি। এর মধ্যে সহায়ক শ্রেণিদের জন্য নির্ধারিত ৩৬টি বাসার মধ্যে ১৭টিতে কর্মচারীরা বসবাস করলেও ১৯টি খালি পড়ে আছে। সাধারণ শ্রেণিদের ৫৪টি বাসার মধ্যে ৩৮টিতেই কেউ থাকেন না।
বাসাগুলো মানসম্মত নয়। যদিও ভাড়া অনেক বেশি। বাসাগুলো সেকেলে হওয়ায় শিক্ষকেরা সেখানে থাকতে চান না।
সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত আবাসনের ভাড়া শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদমর্যাদা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। একই বাসার জন্য কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তাকে দিতে হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা, আবার কাউকে গুনতে হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। নীতিমালা অনুযায়ী প্রভাষক ও কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে মূল বেতনের ৪০ শতাংশ এবং অধ্যাপক ক্যাটাগরির শিক্ষকদের ৩৫ শতাংশ হিসাবে ভাড়া দিতে হয়। অথচ নগরে তিন-চার কক্ষবিশিষ্ট, লিফটসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ফ্ল্যাটের ভাড়া ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারগুলো খালি পড়ে থাকছে।
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসের কোয়ার্টারে থাকলে তাঁর বেতন থেকে প্রায় ২৮ হাজার টাকা কাটা হতো। অথচ তিনি অভিজাত এলাকায় ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে ভালো মানের ফ্ল্যাটে থাকতে পারছেন। সেখানে নিরাপত্তাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বেশি হওয়ায় শিক্ষকেরা কোয়ার্টারে থাকার আগ্রহ দেখান না।
শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতিরিক্ত ভাড়া, নিরাপত্তাহীনতা, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব, কক্ষ কম, ছোট কক্ষ, শৌচাগারের সংখ্যা কম, পুরোনো নকশায় বানানো, নিয়মিত সংস্কার না করাসহ বিভিন্ন কারণে কোয়ার্টারে থাকতে চান না শিক্ষক-কর্মকর্তারা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক বোরাক আলী বলেন, কোয়ার্টারের বাসাগুলো মানসম্মত নয়। যদিও ভাড়া অনেক বেশি। বাসাগুলো সেকেলে হওয়ায় শিক্ষকেরা সেখানে থাকতে চান না। এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে পাঁচ-ছয়বার সভা করেছেন। কিন্তু তাঁরা কোনো কর্ণপাত করেননি। কোয়ার্টারের মান অনুযায়ী ভাগ করে ভাড়া নির্দিষ্ট করে দিলে সেগুলো ফাঁকা থাকবে না বলে মনে করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার দেখভাল করে প্রকৌশল দপ্তর। প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোয়ার্টারে থাকলে যে ভাড়া কাটা হয়, সেই টাকা দিয়ে রাজশাহীতে ভালো সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন বাসা পাওয়া যায়। এ জন্য শিক্ষক-কর্মকর্তারা কোয়ার্টারে থাকতে চান না। তাঁরা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছেন। ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে। এটি তাঁদের হাতে নেই।
সার্বিক বিষয়ে সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় ২০ বছর এভাবে চলছে। তথ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশে সরকারি বাড়ি ভাড়ার বিষয়টি নির্ধারণ করে দেয়। শিক্ষক সমিতি ও কর্মকর্তারা তাঁদের অসুবিধাগুলো তুলে ধরেছিলেন। তাঁরা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়েছেন এবং বলেছেন অধিকাংশই যৌক্তিক দাবি। পদমর্যাদা অনুযায়ী যে ভাড়া কাটা হয়, বেশির ভাগ কোয়ার্টারে সেই সুযোগ-সুবিধা নেই। কয়েক দিন আগে বাসা ভাড়ার বিষয়টি অপরিবর্তিত থাকবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়েছে। এ জন্য তাঁরা চাইলেও ভাড়া কমাতে পারছেন না। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বিষয়টি তাঁদের নজরদারিতে আছে। ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে বলে তিনি জানান।