চেয়ারম্যান প্রার্থীর এজেন্টের বিরুদ্ধে অন্যের ভোট দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ

প্রায় ভোটারশূন্য মৈশালা দারুল উলুম মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্র। পাংশা, রাজবাড়ী, ৮ মে, ২০২৪ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর (মোটসাইকেল প্রতীক) পোলিং এজেন্টের বিরুদ্ধে অন্য ভোটারের ভোট দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর (আনারস প্রতীক) পোলিং এজেন্ট। আবার আনারস প্রতীকে ভোট দেওয়ার পর সেই ব্যালট ছিঁড়ে ফেলারও অভিযোগ করেছেন তিনি।

আজ বুধবার দুপুরে পাংশা পৌরসভা এলাকায় মৈশালা দারুল উলুম মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের একটি কক্ষে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন আনারস প্রতীকের এজেন্ট বিলকিছ পারভীন। অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও একজন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।

বিলকিছ উপজেলা চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী ফরিদ হাসানের পোলিং এজেন্ট। একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী খন্দকার সাইফুল ইসলামের এজেন্ট নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ভোটারদের সহায়তা করার নামে তাঁদের ভোট নিজ প্রার্থীর পক্ষে দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন বিলকিছ।

অবশ্য অন্যের ভোট দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাসির উদ্দিন। তাঁর দাবি, তিনি বয়স্ক ভোটারদের সহায়তা করেছেন। কারও ভোট দেননি।

ফরিদ হাসান বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান। আগের মেয়াদেও তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন তিনি। সেবার স্থানীয় সংসদ সদস্য তাঁকে সমর্থন দিয়েছিলেন বলে আলোচনা আছে।

এমন ঘটনা দুইটা ঘটেছে। আমি তাদের এসব করতে নিষেধ করেছি। বিষয়টি প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
হাশমত আলী, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা

এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাইফুল ইসলাম মাছপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) পাঁচবারের চেয়ারম্যান। ওই পদ থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও তিনি। রেলমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম এবার তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্র বলছে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা হয়েছে। কেন্দ্রটির পাশে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহিদুল ইসলামের বাড়ি। এই নেতা সাইফুল ইসলামের পক্ষে কাজ করছেন।

আরও পড়ুন

দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রটিতে যাওয়ার পর ৬ নম্বর বুথে থাকা আনারস প্রতীকের পোলিং এজেন্ট বিলকিছ পারভীন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, এ বুথে ভোটারদের ভোট দিয়ে দেওয়া হচ্ছে শুনে অন্য বুথ থেকে এখানে এসেছেন তিনি। পরে শোনেন, মোটরসাইকেল প্রতীকের এজেন্ট নাসির ভোটারদের ভোট দিয়ে দিচ্ছেন। বিলকিছ আরও অভিযোগ করেন, মোটরসাইকেল ও আনারসের এজেন্টের বাইরে আরও যে তিনজন পোলিং এজেন্ট আছেন, তাঁরাও মোটরসাইকেল প্রতীকের লোক। যদিও তাঁরা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর পোলিং হিসেবে আছেন।

কেন্দ্রটিতে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা যায়, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট কারও পরিচয়পত্রে ছবি নেই।

অন্য বুথেও একই রকম অনিয়মের ঘটনা ঘটছে দাবি করে বিলকিছ বলেন, ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। কিন্তু তিনি কাউকে ভয় পান না। যা ঘটছে, তা নিয়ে সত্য বলবেনই।

প্রত্যক্ষদর্শী দুই ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ভোটারদের ভোট দিয়ে দেওয়া ও ভোট প্রভাবিত করার বিলকিছ পারভীনের অভিযোগের পর কেন্দ্রে হট্টগোল বেড়ে যায়। পরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বিলকিছ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ফরিদ হাসানের ভাতিজি।

পোলিং এজেন্ট নাসির উদ্দিন
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে অন্যের ভোট দিয়ে দেওয়ার বিষয়ে বুথে থাকা সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হাশমত আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন ঘটনা দুইটা ঘটেছে। আমি তাদের এসব করতে নিষেধ করেছি। বিষয়টি প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’

পরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবু বকরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর কাছে অভিযোগ আসার পর তিনি পোলিং এজেন্টদের সতর্ক করে দিয়েছেন। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

মৈশালা দারুল উলুম মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৯৭৬। বেলা একটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৩৮০টি।

কেন্দ্রটিতে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা যায়, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট কারও পরিচয়পত্রে ছবি নেই।

এ বিষয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবু বকর প্রথম আলোকে বলেন, পোলিং এজেন্টরা দেরি করে এসেছেন। যথাসময়ে ভোট শুরু করতে গিয়ে পরিচয়পত্রে ছবি যুক্ত করতে পারেননি।

আরও পড়ুন