রাকসু: আজ মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ভবনছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের পুনর্নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আজ রোববার সকাল থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু আজ থেকে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পূর্বঘোষিত কর্মবিরতি রয়েছে। এ কারণে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখছেন ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মীরা।

রাকসু, হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর। তবে নির্বাচনের তারিখ অপরিবর্তিত রেখে ইতিমধ্যে দুবার তফসিল পুনর্বিন্যাস করেছে নির্বাচন কমিশন। সবশেষ গত বুধবার মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরুর কথা থাকলেও আগের দিন মধ্যরাতে তা স্থগিত করা হয়। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। এরপর বুধবার বিকেলেই দ্বিতীয়বারের মতো তফসিল পুনর্বিন্যাস করে কমিশন।

নতুন তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বিতরণ হবে ২৪ আগস্ট (আজ) থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত। রাকসু ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে। আর হল সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র সংশ্লিষ্ট হলের প্রশাসনিক কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে হবে। তবে শিক্ষক ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে রাকসু কোষাধ্যক্ষ কার্যালয় ও হল থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজয়-২৪ হলের প্রাধ্যক্ষ মো. জামিরুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরুর জন্য আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। কর্মকর্তা–কর্মচারীরা যদি কর্মবিরতি পালন না করেন, তাহলে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে। কাল অফিসে গেলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’

অবশ্য কমিশন মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করার বিষয়ে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোনয়নপত্র বিতরণ হবে কি না, তা নির্ভর করছে রাকসু কোষাধ্যক্ষ, হল প্রাধ্যক্ষ ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ওপর। তাঁরা যদি ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালন করেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সেটি সম্ভব হবে না।’

রাকসুর মনোনয়নপত্র বিতরণের সময়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবার কর্মবিরতির ডাক দেওয়ার পেছনে অন্য কারণ রয়েছে বলে মনে করে ছাত্রশিবির। সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোস্তাকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোষ্য কোটা একটি মীমাংসিত বিষয়। রাকসুর শেষ সময়ে এসে এই দাবি উত্থাপনের পেছনে অন্য কোনো রহস্য থাকতে পারে।’

মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরুর জন্য আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। কর্মকর্তা–কর্মচারীরা যদি কর্মবিরতি পালন না করেন, তাহলে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে। কাল অফিসে গেলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারব।
বিজয়-২৪ হলের প্রাধ্যক্ষ মো. জামিরুল ইসলাম

একই অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক ও সম্ভাব্য ভিপি (সহসভাপতি) পদপ্রার্থী মেহেদী সজীবের। তিনি বলেন, পোষ্য কোটার দাবিতে যে আন্দোলন চলছে, এর মাধ্যমে নির্বাচন বিলম্বিত ও বানচালের অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে।

তবে এই কর্মবিরতি ও ধর্মঘটের সঙ্গে রাকসু নির্বাচনের সম্পর্ক নেই বলে জানালেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমীরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দাবি মেনে নিলেই আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেব।’

এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনের হঠাৎ পদত্যাগও নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে কিছুটা বাধাগ্রস্ত করেছে। ২০ আগস্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেনকে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। এরপর তিনি দায়িত্ব থেকে সরে যান। তাঁর জায়গায় গতকাল অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলামকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এত দিন তিনি কমিশনার হিসেবে ছিলেন।

প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় শিক্ষার্থীদের ছবি না থাকা, ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর না করা, নারী প্রার্থীদের সাইবার বুলিং রোধে মনিটরিং সেল গঠন না করার মাধ্যমে প্রশাসন নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে ব্যর্থ বলে অভিযোগ বেশির ভাগ ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মীর। তাঁরা মনে করেন, তাঁদের এসব দাবি পূরণ না হলে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।

প্রশাসন নির্বাচনের যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেনি অভিযোগ করে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সুলতান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিতে একদিকে ক্লাস হচ্ছে না, অন্যদিকে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর কোনো দাবি ও প্রস্তাবও মেনে নেয়নি প্রশাসন। এমন প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিয়ে আমরা শঙ্কায় রয়েছি।’

তবে কমিশন একটি নির্দিষ্ট সংগঠনের কাছে রাকসু হস্তান্তরের ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী মারুফের। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) তৈরি করতে পারেনি। কর্মবিরতির ঘোষণায় যে সংকট তৈরি হয়েছে, এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়ী বলে মনে করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল।

যদিও এসব বিষয় নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ একটি আপেক্ষিক বিষয়। শিক্ষক ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আন্দোলন মনোনয়নপত্র বিতরণে প্রভাব ফেলবে না। নির্বাচনের কার্যক্রম এগিয়ে গেলেই এই সংকটগুলো সমাধান হয়ে যাবে।’