নদীর ভাঙনে বিলীন শতাধিক বসতভিটা 

আগস্টের শেষ সপ্তাহে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে দশানী নদীতে পানি বাড়ে। দুই সপ্তাহ ধরে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

দশানী নদীতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ৯টি গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি সাধুরপাড়া ইউনিয়নের আইরমারী খানপাড়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

দশানী নদীতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ৯টি গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ভাঙনে ফসলি জমি, ফলের বাগান, রাস্তা ও শতাধিক বসতভিটাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীভাঙনের কারণে হুমকিতে রয়েছে আরও ৩০০ বসতভিটা। নদীভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, নদীতীরের মানুষ ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। গাছগুলোও কেটে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। অনেক গাছপালা ভেঙে পানিতে ডুবে গেছে। গ্রামগুলোয় চলছে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার কর্মযজ্ঞ। ভাঙন আবার অনেকের বসতভিটার একদম কাছে চলে আসছে।

প্রতিবছর এ এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। কিন্তু এখানে স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের দেখার কেউ নেই।
রবিউল আলম, বাসিন্দা, কুশলনগর গ্রাম

কুশলনগর গ্রামের জিয়াউর রহমান বাগানের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ভাঙন তুলনামূলক কম থাকে। বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়। এবার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। শতাধিক গাছের একটি বাগান ছিল তাঁর। মূলত গাছের কাঠ বিক্রি করতেন তিনি। এবারের ভাঙনে বাগানটি নদীতে চলে যাচ্ছিল। পরে বাগানের গাছগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছেন।

কুশলনগর গ্রামের রবিউল আলম বলেন, ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। তাঁদের অনেক দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। প্রতিবছর এ এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। কিন্তু এখানে স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তাই প্রতিবছর কয়েক শ মানুষ গৃহহারা হচ্ছেন। তাঁদের দেখার যেন কেউ নেই।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, আগস্টের শেষ সপ্তাহে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে দশানী নদীতে পানি বাড়ে। দুই সপ্তাহ ধরে পানি কমতে থাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। দুই সপ্তাহে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বাংগালপাড়া, আইরমারী খানপাড়া, চরআইরমারী, চরকামালের বার্ত্তী, আউলপাড়া ও সেকেরচর, নিলাখিয়া ইউনিয়নের কুশলনগর, দক্ষিণ কুশলনগর ও সাজিমারা গ্রামে শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। এ ছাড়া ফসলি জমি, বিভিন্ন ফলের বাগান ও রাস্তাঘাট বিলীন হয়েছে। ভাঙনরোধে প্রশাসন এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এখন ভাঙন গ্রামগুলোর ঘনবসতির দিকে যাচ্ছে।

কুশলনগর গ্রামের বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন বলেন, গ্রামের পশ্চিম পাশ দিয়ে দশানী নদী চলে গেছে। বন্যার পর থেকে নদীতে প্রবল স্রোত বইছে। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন চলছে। পাড় ভেঙে নদীতে আছড়ে পড়ছে। গত ছয় থেকে সাত বছরে তাঁর বাড়ি তিনবার নদীগর্ভে চলে যায়। এখন অন্যের জমিতে থাকেন। সাত বছর ধরে গ্রামে ভাঙন হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত গ্রামের চার ভাগের দুই ভাগ এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে যেভাবে ভাঙন চলছে, তাতে কোনো ব্যবস্থা না নিলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বহু ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংগালপাড়া গ্রামের কৃষক মিস্টার আলী বলেন, তাঁদের পরিবারের সবাই এখন নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত। তাঁর ছয়জন নিকট আত্মীয় কয়েক বছরে নদীভাঙনের শিকার হন। তাঁরা সব হারিয়ে এখন ঢাকার বস্তিতে বসবাস করেন। এমন বহু পরিবার এখন সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। এত মানুষ সব হারানোর পরও ভাঙনরোধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যখন পানি বেশি থাকে, তখন কিছু বালুর বস্তা ফেলা হয়। এ ছাড়া আর কোনো কিছু করেনি প্রশাসন।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙন স্থানগুলো সরেজমিনে দেখা হয়েছে। ইতিমধ্যে কুশলনগর এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া দশানী নদীর ১৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙনরোধে স্থানীয়ভাবে কাজের জন্য একটি প্রকল্প তৈরির কাজ প্রক্রিয়াধীন। প্রকল্পটি পাস হলে ওই সব এলাকায় ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধান হবে।