ভাড়া বাড়িকে নিজের দাবি করার অভিযোগ মহিলা আ.লীগের নেতা বিরুদ্ধে

ময়মনসিংহ জেলার মানচিত্র

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার ধামদী মহল্লায় মো. ইছহাক মিয়ার বাড়ি ২০১৮ সালে ভাড়া নেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য মমতাজ জাহান। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পর থেকে চলাফেরা করতে পারেন না ইছহাক মিয়া। ওই বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে পৌরসভার কাঁকনহাটি মহল্লায় থাকেন তিনি। এই সুযোগ মমতাজ বেগম তাঁর বাড়িটি কিনেছেন দাবি করে দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইছহাক মিয়া।

ধামদী মহল্লার ওই বাড়ির আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেও একই কথা জানা গেছে। বাড়িটির সামনের দেয়ালে মমতাজ জাহানের দলীয় পদ–পদবি ও ছবি উল্লেখ করে বিশাল একটি ব্যানার লাগানো রয়েছে।

বাড়িটি দখলমুক্ত করার জন্য ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে দাবি করেন মো. ইছহাক মিয়া।

ইসহাক মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৮ সালে তাঁর বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন মমতাজ জাহান। প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ ১ হাজার ৪০০ টাকা নিয়ে রসিদ প্রদান করে আসছিলেন তিনি। ভাড়া আদায়ের প্রতিটি রসিদে মমতাজ জাহানের স্বাক্ষর রয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মমতাজ জাহান বাড়িভাড়া পরিশোধ করেন। ২০২১ সাল থেকে বাড়িভাড়া প্রদানে গড়িমসি করতে শুরু করেন তিনি। নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ না করায় বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য মমতাজ জাহানকে একাধিক নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি একটি নোটিশও গ্রহণ করেননি। বরং আওয়ামী লীগের উচ্চপদস্থ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তাঁকে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের গালিগালাজ ও হুমকি দিতেন।

মমতাজ জাহান ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার ধামদী মহল্লার নান্টু মিয়ার মেয়ে। তিনি এলাকায় মিতু নামে পরিচিত। গত বুধবার মুঠাফোনে যোগাযোগ করা হলে মমতাজ জাহান বাড়ি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেন। দলীয় প্রভাব দেখিয়ে কাউকে হুমকি দেননি দাবি করে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে বাড়িটি কেনার জন্য তিনি ইছহাক মিয়ার সঙ্গে বায়না চুক্তি করেছেন। ইছহাক মিয়া ওই সময় তাঁকে বাড়ির দখল বুঝিয়ে দিয়েছেন। সেই সূত্রে তিনি বাড়িটিতে বসবাস করছেন। ইছহাক মিয়া চাইলে আদালতে যেতে পারেন।

উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মমতাজ জাহানের বিরুদ্ধে খাসজমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযাগ রয়েছে। ভূমি কার্যালয় ২০২০ সালে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিল। তবে এলাকার কেউ নাম–পরিচয় প্রকাশ করে মমতাজ জাহানের বিরুদ্ধে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. হাফিজা জেসমিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে ইছহাক মিয়ার সই করা একটি লিখিত আবেদন পেয়েছেন। সভায় আবেদনটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সভা থেকে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। তাই আইনি সমাধানের জন্য ইছহাক মিয়ার পরিবারকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ঈশ্বরগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, নথিপত্রে উল্লিখিত ভূমির সর্বশেষ নামজারির খতিয়ান ইছহাক মিয়ার নামে রয়েছে। পুলিশ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছিল। তিনি সেই প্রতিবেদনটি জেলার গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (এএসপি) কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে এএসপি মো. সুমন মিয়া বলেন, এটি পুলিশের অভ্যন্তরীণ একটি বিষয়। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চান না।

বাড়ির মালিক মো. ইছহাক মিয়া ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। কাঁকনহাটি মহল্লায় তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। ব্রেন স্ট্রোক হওয়ায় কারও সহায়তা ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। তাঁর কাছে থাকা কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, তিনি ১৯৯৭ সালে মো. ইব্রাহীমের কাছ থেকে ৩৩১৯ নম্বর সাফকবলা দলিলমূলে ধামদী মৌজায় ৫ শতক জমি কিনেছিলেন। পরে অবসরকালীন ভাতার টাকায় ওই জমিতে একতলা ভবন নির্মাণ করেন। এরপর থেকে বাড়িটি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ভাড়া দিয়ে আসছিলেন।

এলাকার কাউন্সিলর মো. মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ইছহাক মিয়া বাড়ি বিক্রি করেননি। শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত বাড়িটি বিক্রি হলে অনেকেই জানতে পারতেন। ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. আবদুছ ছাত্তার বলেন, ‘বাড়িটির হোল্ডিং ইছহাক মিয়ার নামে। আমি পৌরসভার মেয়র। শহরের কোনো বাড়ি বিক্রি হলে আমি জানতাম।’

ইছহাক মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া (৪০) অভিযোগ করে বলেন, ‘আব্বা অসুস্থ থাকায় বাড়িটি দখলমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন স্থানে আবেদন করেছি। এতে আমার প্রতি মমতাজ জাহান ক্ষুব্ধ ছিলেন। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর রাতে একটি মামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য পুলিশ আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে যায়। থানায় গিয়ে মমতাজ জাহানকে সেখানে বসে থাকতে দেখি। পরে মমতাজ জাহান বাদী হয়ে আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আমি ৪০ দিনের বেশি সময় কারাগারে ছিলাম।’

গত ২ ফেব্রুয়ারি আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন জানিয়ে রুবেল মিয়া বলেন, ‘আমাদের পুরো পরিবার আরও হয়রানির মুখে পড়তে পারে—এই আশঙ্কায় আছি।’