সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে হতাশ পরিবার

দিবসটি উপলক্ষে আজ মরহুমের ঢাকার বানানী কবরস্থানে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, মোনাজাত ও ফাতিহা পাঠ ও মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে।

শাহ এ এম এস কিবরিয়া

আজ ২৭ জানুয়ারি শনিবার সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের ১৯ বছর। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে দলীয় এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় প্রাণ হারান তিনি। আলোচিত এ মামলায় বর্তমানে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।

তবে এ মামলার ধীরগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত নেতার ছেলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গণ অধিকারের সাবেক সভাপতি রেজা কিবরিয়া।

দিবসটি উপলক্ষে আজ শনিবার মরহুমের ঢাকার বানানী কবরস্থানে বেলা ১১টায় পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, মোনাজাত ও ফাতিহা পাঠের পর এক মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এতে রেজা কিবরিয়াসহ অনেকেরই উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এদিকে কিবরিয়ার জন্মস্থান হবিগঞ্জে কিবরিয়া স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেও হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।

২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে আওয়ামী লীগের ঈদপরবর্তী এক জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। ওই হামলায় তাঁর ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী নিহত হন। আহত হন ৭০ জন।

ঘটনার পরদিন জেলা আওয়ামী লীগের সেই সময়কার সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা মামলা ও পুলিশ বাদী হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরও ১টি মামলা—মোট ২টি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৫ সালে ১৮ মার্চ শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাইউমসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রথম অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করে বাদীপক্ষ। পরে ২০০৭ সালে মামলাটি পুনর্তদন্তের জন্য আবার সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় দফায় ২০১১ সালের ২০ জুন আসামির সংখ্যা আরও ১৬ জন বাড়িয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এ নিয়েও আপত্তি ওঠে নিহত নেতার পরিবার থেকে।

শেষ ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর মামলার পঞ্চম তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট অঞ্চলের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেরুন্নেসা পারুল হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে নতুন করে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব প্রয়াত হারিছ চৌধুরী, সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া ওরফে জি কে গউছ, মওলানা তাজউদ্দিনের ভগ্নিপতি হাফেজ মো. ইয়াহিয়া আবু বকর, দেলোয়ার হোসেন, শেখ ফরিদ, আবদুল জলিল, মাওলানা শেখ আবদুস সালামসহ ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়। এ ৩৫ জনের মধ্যে দুইজন মামলা চলাকালীন প্রাণ হারিয়েছেন।

বর্তমানে এ মামলায় সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। মামলার সরকারি কৌশলী ও সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি সরোয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল জানান, অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী, বিশেষ করে যাঁরা ঘটনার সময় আহত হন, তাঁদের অনেকেই এখনো সাক্ষ্য দেননি।

রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘১৯ বছরেও এর সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি, এর বিচার হয়নি। এ মামলায় বিএনপির কিছু নিরীহ নেতা–কর্মীকে জড়ানো হয়েছে, যাঁরা এ মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না। শেখ হাসিনা ওয়াজেদের শাসন যত দিন চলবে, এর বিচার পাব, এ আশা আমরা করি না।’