নির্বাচনের মাঠ ছাড়েননি সংসদ সদস্য সাহাদারার ছেলে ও ভাই

বগুড়া জেলার মানচিত্র

বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্দেশনা না মেনে এখনো মাঠে আছেন বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের ছেলে ও ছোট ভাই। গতকাল মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দের পর তাঁরা দুজন চেয়ারম্যান পদে নিজ উপজেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করেছেন। এই দুজন ছাড়া দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের আরও পাঁচজন নেতা প্রার্থী হয়েছেন।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের (এমপি) পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজনদের অংশগ্রহণ না করতে বা অংশগ্রহণের প্রক্রিয়ায় থাকলে সেখান থেকে সরে আসতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে নির্দেশ আছে। তবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে তেমন কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনে সারিয়াকান্দিতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে দলের বেশ কয়েকজন নেতা মাঠে নামেন। কিন্তু গত ১৬ মার্চ আস্থাভাজন নেতা-কর্মীদের নিজের বাসায় ডেকে সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান তাঁর ছেলে মোহাম্মেদ সাখাওয়াত হোসেনকে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী ঘোষণা করেন। এরপর অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠে নামেন সাখাওয়াত। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সাখাওয়াত মায়ের অনুসারীদের নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা নিয়ে বগুড়া-১ আসনে টানা তিনবার সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান। ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে তাঁর স্ত্রী সাহাদারা মান্নান দলীয় মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাহাদারার ছেলে সাখাওয়াত ছাড়াও এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন থেকে আরও চারজন চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। তাঁরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম (মন্টু), উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক আহম্মেদ, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী। তাঁদের মধ্যে রেজাউল করিম সংসদ সদস্য সাহাদারার বিরোধী নেতা হিসেবে পরিচিত।

রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে সাহাদারা মান্নান নিজেই প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। দল তাঁকে (রেজাউল) মনোনয়ন দিলে সাহাদারা মান্নান নৌকা ডোবাতে মাঠে নেমেছিলেন। তখন বিষয়টি কেন্দ্র পর্যন্ত গড়িয়েছিল। এবার দলীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণার সুযোগ নেই। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে তিনি নিজের ছেলেকে প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে নেতা-কর্মীদের তাঁর পক্ষে কাজ করতে চাপ দেন। এতে ভেতরে-ভেতরে ক্ষুব্ধ দলের একাংশ।

অন্যদিকে সোনাতলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন সাহাদারা মান্নানের ছোট ভাই মিনহাদুজ্জামান ওরফে লিটন। এখানে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। জাকির জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও মিনহাদুজ্জামানকে দলীয় প্রার্থী করেছিলেন সাহাদারা মান্নান। পরে মিনহাদুজ্জামান সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন।

জাকির হোসেন মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশ লঙ্ঘন করে সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান এবারও তাঁর ভাই মিনহাদুজ্জামানকে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ভাইয়ের পক্ষে কাজ করতে নেতা-কর্মীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন তিনি। দলের সিংহভাগ নেতা-কর্মী কেন্দ্রের পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আমরা কেন্দ্রের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। কেন্দ্র থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হবে, অবাধ্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সেভাবেই জেলা কমিটি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’