তিন দফা দাবি পূরণের সময়সীমা বেঁধে দিলেন জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা

তিন দফা দাবি আদায় না হলে সারা দেশে ১ আগষ্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য জ্বালানি তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও ট্যাংকলরির মালিকেরা। আজ রোববার খুলনা নগরের ট্যাংকলরি অ্যাসোসিয়েশন ভবনে
ছবি: প্রথম আলো

জ্বালানি তেল বিক্রয়ের ওপর কমিশন বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবি পূরণে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও ট্যাংকলরির মালিকেরা। এই সময়ের মধ্যে তাঁদের দাবিগুলো না মানলে ১ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা দেশে জ্বালানি তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

আজ রোববার দুপুরে খুলনা ট্যাংকলরি ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।

জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের তিন দফা দাবি হচ্ছে জ্বালানি তেল পরিবহনকারী ট্যাংকলরির অর্থনৈতিক জীবনকাল ৫০ বছর করা, জ্বালানি তেল বিক্রয়ের ওপর প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট বিধায় প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সুস্পষ্ট গেজেট প্রকাশ করা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব শেখ ফরহাদ হোসেন বলেন, জ্বালানি তেল বিক্রয়ের ওপর ডিলারদের কমিশন বৃদ্ধির দাবি জ্বালানি ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের। তবে বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। জ্বালানি তেলের মূল্য যখন ৬০ টাকা ছিল, তখন যে হারে কমিশন দেওয়া হতো, তেলের মূল্যে দ্বিগুণ হওয়ার পরও প্রায় একই হারে কমিশন দেওয়া হচ্ছে। অথচ তেল কিনতে ডিলার বা এজেন্টদের দ্বিগুণ বিনিয়োগ করতে হচ্ছে, একই সঙ্গে জিনিসপত্রের মূল্যে ঊর্ধ্বগতির ফলে কর্মচারীর বেতন অনেকাংশ বৃদ্ধি করতে হয়েছে। এ ছাড়া সব লাইসেন্স ফি প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিসহ ট্যাংকলরির যন্ত্রাংশের মূল্যে দ্বিগুণ হয়েছে।

পাশাপাশি যেখানে অটো গ্যাস (এলপিজি) ফিলিং স্টেশনে প্রতি লিটার ৪৬ দশমিক ৫০ টাকা বিক্রি করে ৮ টাকা অর্থাৎ ১৭ শতাংশ কমিশন পাচ্ছে, সেখানে ১৩০ টাকা পেট্রল বা অকটেন বিক্রি করে ৪ টাকা অর্থাৎ ৩ শতাংশ কমিশন দেওয়া হচ্ছে। ফলে এলপিজি থেকে প্রায় তিন গুণ বেশি অর্থ বিনিয়োগ করে জ্বালানি ব্যবসায়ীদের ন্যূনতম কমিশন দেওয়া হচ্ছে এবং যা দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় অবস্থান করছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পর থেকে তেল বিক্রয় অর্ধেকে নেমে গেছে। ফলে আয়ও কমে গেছে, কারণ বিক্রয়ের ওপরই আমাদের কমিশন নির্ভরশীল। অথচ সংশ্লিষ্টরা সবকিছু জানেন এবং আমাদের সঙ্গে বারবার বৈঠক করে কমিশন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি ও সুপারিশ পেশ করে শুধু সময় নষ্ট করে চলেছেন। জ্বালানি ব্যবসায়ীরা আশাহত হয়ে অস্তিত্ব-সংকটে ভুগছেন। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত এ সমস্যা ও সংকটের আবর্ত হতে বের হয়ে আসার জন্য জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস বা বৃদ্ধির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে স্থায়ী ফয়সালার জন্য জ্বালানি তেল বিক্রয়ের ওপর ডিলার্স কমিশন সাড়ে ৭ শতাংশ করার জোর দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিলার্স কমিশন ও ট্যাংকলরি ভাড়া বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। জ্বালানি তেল বিপণন কাজে নিয়োজিতদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গেজেটের মাধ্যমে জ্বালানি ব্যবসায়ীদের অবস্থান-মর্যাদা কমিশন এজেন্ট ঘোষণার দাবি জানানো হয়।

তিন দফা দাবি ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে আগামী ১ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত সব জ্বালানি ব্যবসায়ীরা জ্বালানি তেল উত্তোলন ও পরিবহনে বিরত থাকার সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন খুলনা বিভাগীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম মাহবুব আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মিরাউল ইসলাম, বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতি খুলনা বিভাগীয় কমিটির সভাপতি আবদুল গফ্ফার বিশ্বাস, সহসভাপতি মোড়ল আবদুস সোবাহান, সাধারণ সম্পাদক শেখ মুরাদ হোসেন প্রমুখ।