উখিয়ার পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযানে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার, আরসার কমান্ডারসহ গ্রেপ্তার ২

কক্সবাজারের উখিয়ার লাল পাহাড়ে র‍্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার আরসা কমান্ডারসহ দুই সন্ত্রাসী। আজ সকালেছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের উখিয়ার দুর্গম লাল পাহাড়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) একটি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে র‍্যাব। অভিযানে আরসার আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, গ্রেনেডসহ নানা অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। আস্তানায় র‍্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে আরসা সন্ত্রাসীরা গুলি ছোড়ে। এতে র‍্যাবের সঙ্গে আরসার সদস্যদের গুলি বিনিময় হয়। এ সময় আরসার বাংলাদেশ কমান্ডার মো. শাহানুর প্রকাশ মাস্টার সলিম (৩৮) ও তাঁর এক সহযোগী মো. রিয়াজকে (২৭) গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

আজ বুধবার ভোররাতে হাকিমপাড়া আশ্রয়শিবিরের পশ্চিমে দুর্গম লাল পাহাড়ে এ অভিযান শুরু হয়। বেশ কয়েক ঘণ্টার অভিযানে আরসার আস্তানা থেকে ৫টি গ্রেনেড, ৩টি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশে তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি ককটেল, একটি বিদেশি রিভলবার, একটি এলজিসহ বিপুল গোলাবারুদ, কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে ঘটনাস্থল লাল পাহাড়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অভিযানের খবর গণমাধ্যমকে জানান র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল গেছে।

এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন আরও বলেন, লাল পাহাড়ে আরসা সন্ত্রাসীদের অবস্থানের খবর পেয়ে র‍্যাবের বিশেষ একটি দল সেখানে অভিযান শুরু করে। এ সময় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে র‍্যাবের গুলি বিনিময় হয়। একপর্যায়ে আরসা কমান্ডার মাস্টার সলিমুল্লাহ ও তাঁর সহযোগী রিয়াজকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরসার এই দুই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় হত্যা, ডাকাতি, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

র‍্যাব অধিনায়ক বলেন, মাস্টার সলিম বর্তমানে বাংলাদেশে আরসার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নেতৃত্বে আশ্রয়শিবিরগুলোতে আবারও আরসার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে। এ জন্য পাশের দেশ মিয়ানমার থেকে অস্ত্র গোলাবারুদ সংগ্রহ করে তারা রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাস সৃষ্টি করছে।

মাস্টার সলিম উখিয়ার বালুখালী (ক্যাম্প-১৫) আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা সৈয়দুল আবেরার ছেলে এবং সহযোগী মো. রিয়াজ বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮) এ-২৩ ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ নুরের ছেলে।

গণমাধ্যমে পাঠানো র‍্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাস্টার সলিম ২০১৭ সালের মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১৫) বসবাস শুরু করেন। আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আরসা নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ায় মাস্টার সলিমকে আরসার প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সলিমের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। রিয়াজের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রয়েছে।

আজ দুপুরে উখিয়ার লাল পাহাড়ে প্রেস ব্রিফিং এ বক্তব্য দেন র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

র‍্যাব কর্মকর্তারা জানান, মাদক চোরাচালান, আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ এবং আধিপত্য বিস্তারের জন্য আরসার সদস্যরা উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে নানা অপরাধে জড়ায়। এর মধ্যে মুক্তিপণের জন্য অপহরণসহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও রয়েছে।

সর্বশেষ গত সোমবার ভোরে উখিয়ায় ৪ নম্বর এক্সটেনশন রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে হেড মাঝি মোহাম্মদ ইলিয়াসকে (৪৩) ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে আরসা সন্ত্রাসীরা। ইলিয়াস ওই আশ্রয়শিবিরের সি-৩ ব্লকের বাসিন্দা আবুল কাশেমের ছেলে।

এর আগে ৬ মে আরসা সন্ত্রাসীরা ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৮) রোহিঙ্গা নেতা জাফর আহমদকে। আগের দিন উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে আরসা সন্ত্রাসীরা গলা কেটে হত্যা করে আরএসও সদস্য নুর কামালকে।

র‍্যাব কর্মকর্তারা জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় ২০২১ সালে রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে আরসা সন্ত্রাসীরা। ২০২২ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাদকবিরোধী যৌথ অভিযান চালাতে গিয়ে আরসা সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। র‍্যাবের তথ্যমতে, আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ঘটনায় ২০২৩ সালে ৬৪ জন এবং ২০২৪ সালের ১৪ মে পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ মাসে ১৬ জন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে খুন হয়েছেন।