ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত মৎস্যজীবী লীগ নেতার মৃত্যু

প্রতিপক্ষের হামলায় ভোনার ইউনিয়ন মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সাকিল আহম্মেদের মৃত্যুর পর এলাকাবাসীর মানববন্ধন। রোববার দুপুরে উপজেলার হলদিবাড়ি এলাকায়ছবি: সংগৃহীত

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ভানোর ইউনিয়ন মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সাকিল আহম্মেদ (২৫) মারা গেছেন। আজ রোববার ভোর পাঁচটার দিকে দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দুপুরে উপজেলার হলদিবাড়ি এলাকার বাসিন্দারা বিক্ষোভ করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবি করেছেন।

এলাকাবাসী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯ আগস্ট জুমার নামাজের খুতবার সময় হলদিবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মো. দেলোয়ার হোসেনের (৪৫) বিরুদ্ধে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে অসম্মান করে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ সময় ভানোর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আলমসহ কয়েকজন মুসল্লি তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। এ ঘটনার পর দেলোয়ার হোসেন মুসল্লিদের কাছে ক্ষমা চান। কিন্তু মসজিদ কমিটি তাঁকে মসজিদে আসতে নিষেধ করে। গত শুক্রবার জুমার জামাত শেষে নতুন ইমাম নিয়োগের বিষয়টি কেন্দ্র করে মুসল্লিরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। মসজিদের বাইরে ইমাম দেলোয়ার হোসেনের পক্ষের লোকজনের সঙ্গে সাঈদ আলমের লোকজনের হাতাহাতি হয়।

ওই হাতাহাতিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বিকেলের দিকে হলদিবাড়ি হাটের একটি চায়ের দোকানে সাঈদ আলম ও দেলোয়ার হোসেনের পক্ষের আব্দুর কাদেরের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি বেধে যায়। এতে উভয় পক্ষের দুজন করে আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় সাঈদ আলম বাদী হয়ে থানায় মামলা করার জন্য এলাকার বিভিন্নজনের কাছে পরামর্শ নিচ্ছেন।

এলাকাবাসী জানান, মামলার বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুলসহ তাঁর লোকজন সাঈদ আলমের পথরোধ করে মারধর করেন। তাঁকে বাঁচাতে ভাই সাকিল আহম্মেদসহ পরিবারের লোকজন ছুটে এলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে সাঈদ ও সাকিল গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে আহত ব্যক্তিদের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে সাকিলের অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক তাঁকে দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। আজ ভোর পাঁচটার দিকে সেখানে সাকিলের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় ভানোর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামসহ মোট ২০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। রফিকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। গত ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ।

এদিকে আজ দুপুরে সাকিল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামসহ তাঁর অনুসারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ঘটনার পর থেকে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম পলাতক থাকায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আসলাম বলেন, বিষয়টি মর্মান্তিক। দলের নেতা-কর্মীর সঙ্গে বসে বিষয়টি আলোচনা করা হবে।

বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল আনাম বলেন, সাকিলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।