জলাবদ্ধতায় আমন চাষ নিয়ে দুঃচিন্তায় চাষিরা

বিদ্যুৎ-সংকটে হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসনে মনু সেচ প্রকল্পের কাশিমপুরে স্থাপিত পাম্প হাউস ২৪ ঘণ্টা চালু না থাকায় এই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

আমন খেতের জমিতে পানি। গত মঙ্গলবার মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওরপাড়ের বিরইমাবাদে
ছবি: প্রথম আলো

গত দু-তিন বছর জলাবদ্ধতার সমস্যা ছিল না। এরপরও কৃষকেরা স্বচ্ছন্দেই আমন চাষ করেছেন। এবারও মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরপারের কৃষক আমনের চারা তৈরি করেছেন। কিন্তু এবার সময়মতো হাওরের পানি কমেনি। হালি চারার বয়স বাড়ছে। আমন রোপণের সময়ও কমে আসছে।

বিদ্যুৎ-সংকটে কাউয়াদীঘি হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসনে মনু সেচ প্রকল্পের কাশিমপুরে স্থাপিত পাম্প হাউস ২৪ ঘণ্টা চালু না থাকায় এই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমির আমন চাষ।

পাউবো, কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতায় অনেক বছর মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওরপারের কৃষকেরা আমন চাষ করতে পারেননি। এদিকে কাশিমপুর পাম্প হাউস সংস্কার ও নতুন পাম্প পুনস্থাপনের পর দু-তিন বছর ধরে এই দুই উপজেলার হাওরপারের কৃষকেরা আমনের চাষ করছেন।

কয়েকজন কৃষক জানান, এই দু-তিন বছর বর্ষায় সেচপাম্প সার্বক্ষণিক চালু থাকায় হাওরে জলাবদ্ধতা হয়নি। বৃষ্টিও কম ছিল। মানুষ নিশ্চিতে আমন ফসল চাষ করেছেন। হাওরপারের মানুষ এবারও আমনের চারা তৈরি ও চাষের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এবার ঘন ঘন বৃষ্টি হচ্ছে। অপর দিকে বিদ্যুৎ-সংকটে কাশিমপুর পাম্প হাউসে নিয়মিত সেচ দেওয়া হচ্ছে না। এতে কাউয়াদীঘি হাওরাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমন খেতের জমি পানিতে তলিয়ে আছে। রোপণ করতে না পারায় হালি চারার বয়স বেড়ে যাচ্ছে। রোপণের সময়ও কমে আসছে। হাওরপারের কৃষকদের মধ্যে আমন চাষ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজন আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, কাউয়াদীঘি হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কাশিমপুর পাম্প হাউস ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার দাবিতে গত ২১ জুলাই হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। সেচপাম্প সার্বক্ষণিক চালু না থাকায় বৃষ্টি এবং উজানের পাহাড়ি ছড়ার (খাল) পানিতে প্রতিদিনই হাওরে পানি বাড়ছে। আমন চাষের সব ধরনের প্রস্তুতি থাকার পরও হাওর-সংলগ্ন সদর উপজেলার আখাইলকুরা ও একাটুনা ইউনিয়নের একাংশ এবং রাজনগরের ফতেহপুর, উত্তরভাগ, মুন্সীবাজার, পাঁচগাঁও ও রাজনগর ইউনিয়নের একাংশের কৃষক মাঠে নামতে পারছেন না। আমন চাষের উপযোগী মাঠের পর মাঠ পানিতে তলিয়ে আছে। আমন চাষ নিয়ে শঙ্কিত এখন হাওরপারের চাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক শামসুদ্দিন আহমদ গত বুধবার বলেন, ‘যদিও ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চারা রোপণ করতে পারবে। কিন্তু যে হালি চারা হয়েছে। তা বুড়া হয়ে যাচ্ছে। পানি শুকানোর ব্যবস্থা করা দরকার।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার সূত্র জানায়, কাশিমপুর পাম্প হাউসের আটটি পাম্প একসঙ্গে চালাতে প্রয়োজন তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ ক্ষেত্রে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ (লোড) হচ্ছে দশমিক ৫ মেগাওয়াট। তখন একটি পাম্প চালানো যায়। রাত ১০টার পর লোড বাড়ে। রাত ১১টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত আটটি পাম্পই চালানো হচ্ছে।