দায়িত্বে ফেরার দেড় ঘণ্টা পরই ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ
উচ্চ আদালতের নির্দেশে দায়িত্ব ফিরে পাওয়ার মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যেই রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তাঁকে ফ্যাসিবাদের ‘দোসর ও অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে গতকাল রোববার সকালে সেখানে বিক্ষোভও করেন তাঁরা।
ওই ইউপি চেয়ারম্যানের নাম এম এফ মাজেদুল। তিনি উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হকের নিকটাত্মীয়। ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। গত বছরের ৫ আগস্ট–পরবর্তী পরিস্থিতিতে তিনি পরিষদে অনুপস্থিত থাকেন। পরে গ্রেপ্তারও হন।
এ ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে যোগীপাড়া ইউপির পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল বারিক। তিনি বলেন, গতকাল রোববার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ফিরে পাওয়া সংক্রান্ত একটি চিঠি নিয়ে পরিষদে আসেন এম এফ মাজেদুল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সই করা চিঠির আদেশ অনুযায়ী ইউপি সদস্যদের ডেকে একটি সভার আয়োজন করা হয়। এতে সাতজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। পরে চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, চেয়ারম্যান চলে যাওয়ার এক ঘণ্টা পর স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৩৫ থেকে ৪০ জন নেতা-কর্মী ইউপি কার্যালয়ে যান। এ সময় তাঁরা চেয়ারম্যান মাজেদুলের বিরুদ্ধে আপত্তিকর স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে পরিষদের সামনে সংক্ষিপ্ত সভা করা হয়। এতে বক্তব্য দেন যোগীপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি সানাউল্লাহ, সাত নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি লুৎফর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক ইউনিয়ন শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক সাহাবুর রহমান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, মাজেদুল আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর। তিনি ভোটারদের আটকে রেখে কারচুপির মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে ঘুমাতে দেননি। পুলিশকে দিয়ে হয়রানি করিয়েছেন। তাঁকে চেয়ারম্যান মানবেন না তাঁরা।
বিক্ষোভ শেষে আন্দোলনকারীরা চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার অভিযোগ, অজ্ঞাতপরিচয় লোকজন তাঁর কাছ থেকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব বুঝে দেওয়া সংক্রান্ত রেজল্যুশনের খাতা কেড়ে নেন। এমনকি তাঁরা সাত সদস্যের স্বাক্ষর করা পাতাটিও ছিঁড়ে ফেলেন। বিকেলে তিনি ঘটনার বিবরণ দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করেছেন।
ইউএনওর সই করা চিঠিতে বলা হয়, এম এফ মাজেদুলের গ্রেপ্তারের পর যোগীপাড়া ইউপির কার্যক্রম চালানোর জন্য প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে সদস্য তৌহিদুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেন মাজেদুল। পরে মাজেদুলকে দায়িত্ব বুঝে দেওয়ার রায় দেন আদালত।
এ বিষয়ে এম এফ মাজেদুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আদালতের নির্দেশে দায়িত্ব ফিরে পেয়েছি। আমি সেদিন চলে আসার পর কক্ষে তালা দেওয়া হয়েছে। আশা করি, প্রশাসন এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।’
বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল ইসলাম বলেন, তিনি ঘটনাটি জেনেছেন এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।