ফরিদপুরে বিএনপির গণসমাবেশ শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টা আগেই বাস চলাচল শুরু
ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টা আগেই বিভিন্ন পথে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। শনিবার বিএনপির এই গণসমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি শেষ বক্তা হিসেবে বিকেল ৪টা ৫৬ মিনিটে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। এর আগেই বেলা তিনটা থেকে লোকাল বাস চলাচল শুরু হয়ে যায়। তবে দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয় মির্জা ফখরুলের বক্তব্য শেষ হওয়ার মিনিট চারেক পর।
এদিকে বাস চলাচল শুরু হলেও জেলা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা পরিবহন ধর্মঘট আজ রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে বলে মাইকিং করা হয়েছিল। যদিও এই মাইকিংয়ের আগে ধর্মঘট শুক্রবার সকাল ৬টা শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত আহ্বান করা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে জেলা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে শহরে মাইকিং করা হয়। ওই মাইকিংয়ে বলা হয়, মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইকসহ সব প্রকার অবৈধ থ্রি-হুইলার এবং ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধের দাবিতে শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ফরিদপুরের সব পথে বাস ও মিনিবাস বন্ধ থাকবে।
অথচ ঘোষিত সময়সীমার পাঁচ ঘণ্টা আগেই জেলার বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল শুরু হয়ে যায়। যদিও শুরু থেকেই বিএনপির নেতারা বলে আসছিলেন, অন্যান্য বিভাগীয় গণসমাবেশের সময়ও থ্রি-হুইলার বন্ধের দাবিতে এমন ধর্মঘটের নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় ফরিদপুরের একইভাবে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয় মূলত বিএনপির নেতা-কর্মীরা যাতে গণসমাবেশে আসতে বিড়ম্বনায় পড়েন এই জন্য। সরকারের মদদে এই ধর্মঘটের উদ্দেশ্যই হলো, গণসমাবেশে জমায়েত যাতে কম দেখানো যায়।
এটা (পরিবহন ধর্মঘট) যে বিএনপির গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করার আয়োজন ছিল, তা পরিষ্কার। কারণ, বিএনপির সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাস চলাচল শুরু করে দেওয়া হয়েছে। এতে বিএনপির জনসমাবেশে লোক আসা বন্ধ করা যায়নি। তবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হয়েছে অপরিসীম।
শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, অভ্যন্তরীণসহ দূরপাল্লার বাসও ততক্ষণে চলাচল শুরু করছে। বাসের সহকারীরা বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের উদ্দেশে হাঁকডাক দিচ্ছেন। কিছু যাত্রী বাসে উঠছেন। তবে তখন পর্যন্ত চিরচেনা ব্যস্ততা বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়নি।
বাসচালক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেলা তিনটার দিকে ভাঙ্গা, সদরপুর, নগরকান্দা ও টেকেরহাট পথে এবং বোয়ালমারী ও কামারখালী পথে লোকাল বাস চলাচল শুরু হয়। তবে তখনো রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দ পথে বাস চলাচল শুরু হয়নি। এই দুই পথে বাস চলাচল শুরু হয় বিকেল পাঁচটার দিকে।
বিএনপির গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ফরিদপুর শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে কোমরপুর আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। এই পথ দিয়েই রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দে চলাচলের পথ। ফলে এ পথে বাস চলাচল শুরু হয় সমাবেশ শেষ হওয়ার পর।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোদাররেস আলী প্রথম আলোকে বলেন, এটা যে বিএনপির গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করার আয়োজন ছিল, তা পরিষ্কার। কারণ, বিএনপির সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাস চলাচল শুরু করে দেওয়া হয়েছে। সরকার মালিক ও শ্রমিকসংগঠনকে কাজে লাগিয়ে এ গণবিরোধী পদক্ষেপ নেয়। এতে বিএনপির জনসমাবেশে লোক আসা বন্ধ করা যায়নি। তবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হয়েছে অপরিসীম।
জানতে চাইলে ফরিদপুর জেলা বাসমালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক জোবায়ের জাকির বলেন, ‘আমাদের ধর্মঘটের সময় শেষ হওয়ার আগে বাস চলাচল করেছে, বিষয়টি আমার জানা নেই।’