তীর সংরক্ষণকাজের মান নিয়ে প্রশ্ন 

২০২০ সালে ৫৭৩ কোটি টাকায় নদীর উভয় তীর রক্ষায় বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজগুলো পায়।

চলছে কুশিয়ারা নদী রক্ষা বাঁধের কাজ। তবে এরই মধ্যে খুলে পড়ছে ব্লক। সম্প্রতি হবিগঞ্জের পাহাড়পুর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

হবিগঞ্জসহ তিনটি জেলার ১০টি ইউনিয়নে ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কুশিয়ারা নদীর তীর সংরক্ষণকাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় কাজ চলমান অবস্থায় বাঁধের বিভিন্ন স্থানে গর্ত ও ফাটল দেখা দিয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে প্রকল্পের কিছু অংশের কাজ বন্ধ রেখেছে পাউবো।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর বর্ষাকালে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ‘কুশিয়ারা ডাইক’ভেঙে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ৫টি, সিলেটের ওসমানী নগর উপজেলার ২টি, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার হেক্টরের ফসল ও হাওরাঞ্চলের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষ কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাড়ে ৭ কিলোমিটারে ৫৭৩ কোটি টাকায় নদীর উভয় তীর রক্ষায় প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার।

পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজগুলো পায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো গোলাম রব্বানী কনস্ট্রাকশন, এএইচ ট্রেডিং করপোরেশন, আরএফএল, ন্যাশনটেক কমিউনিকেশনস ও আবুল কালাম করপোরেশন। ১১টি প্যাকেজে কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার, অদক্ষ লোকবল দিয়ে কাজ করানো ও বাঁধের সঠিক মাপে মাটির ব্যবহার না করার অভিযোগ আনেন এলাকাবাসী। তাঁরা পাউবোকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে বিষয়টি জানান।

নবীগঞ্জের লামাতাজপুর এলাকার বাসিন্দা সিরাজ মিয়া বলেন, নিম্নমানের পাথর ও বালু ব্যবহার করে এবং সিমেন্ট পরিমাণে কম দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্লক নির্মাণ করে তা বাঁধে স্থাপন করে আসছে, যা দেখলেই বোঝা যায়, কতটা নিম্নমানের কাজ।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁধে কোথাও ফাটল দেখা দিয়েছে, কোথাও কোথাও ব্লক উঠে মাটি বের হয়ে গেছে। আবার কোথাও বাঁধ দেবে গেছে। কোনো কোনো স্থানে মাটি না দিয়েই ব্লক বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ বলেন, বাঁধের কাজের মান নিয়ে নানা অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলেছেন।

অনিয়মের বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরএফএলের পরিচালক রাসেল আহমদ বলেন, শুধু তাঁদের নয়, সবার করা ব্লকেই ফাটল দেখা দিয়েছে। নতুন মাটি দেবে যাওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে।

এএইচ ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আরাফাত খান এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। ন্যাশনটেক কমিউনিকেশনসের পরিচালককে কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, কিছু স্থানে ব্লক নির্মাণে মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এএইচ ট্রেডিং করপোরেশনের কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। নিম্নমানের পাথর ও বালু ব্যবহারের অভিযোগ এবং কিছু স্থানে নরম মাটি থাকার কারণে ব্লক দেবে গেছে বলে জেনেছেন। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেবে যাওয়া ব্লক তুলে আবার বালু ও জিও টিউব দিয়ে ব্লক বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।