উজিরপুরে এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছয় ইউপি সদস্যসহ ২০ জনের

বরিশাল জেলার মানচিত্র

বরিশালের উজিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ছয় সদস্যসহ বিভিন্ন পেশার ২০ ব্যক্তি। এসআই মেহেদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজির (উপমহাপরিদর্শক) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

অভিযোগের তদন্ত করে উজিরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাজাহারুল ইসলামকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন ডিআইজি মো. জামিল হাসান। এ জন্য অভিযুক্ত মেহেদী হাসান ও অভিযোগকারীদের আজ রোববার নিজ দপ্তরে তলব করেছেন মাজাহারুল ইসলাম।

অভিযোগকারী ২০ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন বামরাইল ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সুমন হাওলাদার, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সেলিম হাওলাদার, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও উজিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. মাইনুল ইসলাম তালুকদার, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহীন হাওলাদার, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সলেমন হোসেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বজলুর রহমান, বামরাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান ও বামরাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিরাজ হোসেন।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, উজিরপুর মডেল থানায় কর্মরত এসআই মেহেদী হাসান বামরাইল ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (বিট কর্মকর্তা)। তিনি সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার ও মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করেন। গ্রামের নিরীহ মানুষকে ধরে আনেন এবং ছেড়ে দিতে ঘুষ নেন। গ্রামের লোকজনের পারিবারিক ছোটখাটো ঘটনা মীমাংসায় বাধা দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি বামরাইল ইউনিয়নের সাধারণ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। অভিযোগকারীরা তাঁকে উজিরপুর থানা থেকে প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছেন।

দুর্ব্যবহার ও রুক্ষ আচরণের কারণে গত মাসে বামরাইল ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সদস্যরা এসআই মেহেদীর বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাইনুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এসআই মেহেদী হাসান ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পুরো গ্রাম অশান্ত করে তুলছেন। যুবক ও কিশোরসহ সাধারণ মানুষ রাস্তাঘাটে দেখলেই তাঁদের মাদকে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেন। গ্রামে পারিবারিক ছোটখাটো ঘটনা ঘটলে তিনি মীমাংসা করতে বাধা দেন। কোনো পারিবারিক সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রতি ঘটনায় মেহেদী হাসানকে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। না দিলে মামলা দেওয়ার ভয় দেখান। তিনি আরও বলেন, ‘এসব কাজে আমি বাধা দিলে মেহেদী হাসান আমাকে মেরে দাঁত ফেলে দেওয়ার হুমকিও দেন।’

গ্রামের এক মেয়েকে প্রেমঘটিত ঘটনায় জড়িয়ে মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এসআই মেহেদী হাসান ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সেলিম হাওলাদার।

ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিঠু মোল্লা অভিযোগ করেন, ‘আমাকে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করেন এসআই মেহেদী হাসান। আমি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।’

অভিযোগের বিষয়ে এসআই মেহেদী হাসান বলেন, ‘অভিযোগের কোনো সত্যতা নাই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাফর আহম্মদ বলেন, ‘এসআই মেহেদীর বিরুদ্ধে কী আভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তা আমার জানা নেই। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এসআই মেহেদী হাসান ও অভিযোগকারীদের সার্কেল অফিসে হাজির হয়ে তদন্তে সহায়তা করার জন্য থানা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’

এসআই মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন উজিরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাজাহারুল ইসলাম।